জাতীয়

৩৮৮৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন

তিন হাজার ৮৮৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুপস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা অংশ নেন।  সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।

সভা শেষে সাংবাদিকেদের তিনি বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে সপ্তম লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  এজন্য ব্যয় হবে ৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৫ টাকা।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা-আদেন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৬ লাখ টন ডিএপি সার আমদানির ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২০৯৭ কোটি ৯৭ লাখ ৬১ হাজার ৭০০টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় ‘আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলি টানেল সংযোগ সড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরন (শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউপি-০১ এর আওতায় বিভিন্ন কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  এতে ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৯৪৯ টাকা।  মেসার্স তাহের এন্টারপ্রাইজের নেতৃর্তে যৌথ কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বলেন, সভায় ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনের জন্য ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসাবে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য ‘১৭ তলা ফাউন্ডেশনসহ ১৫ তলার ১০০০ বর্গফুটের প্রতি তলায় ৮টি ইউনিট বিশিষ্ট আবাসিক টাওয়ার এবং আনুষঙ্গিক কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৯ টাকা। বাস্তবায়ন করবে মেসার্স দেশ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ও মেসার্স হক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

সভায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একটি প্যাকেজের আওতায় ৫টি লটে ৫৪.৫০ মিলিয়ন খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) সংগ্রহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। এ খাতে ব্যয় হবে ২৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। খাবার বড়িগুলো সরবরাহ করবে টেকনো ড্রাগ লিমিটেড ও রেনেটা লিমিটেড।

তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘রবনাবাদ চ্যানেল (ইনার ও আউটার চ্যানেল) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  এতে ব্যয় হবে ৪০৮ কোটি ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৬ টাকা। বেলজিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

সভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, ময়মনসিংহ জোন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ জিডি-১ এর লট-৪ এর আওতায় টার্নকি ভিত্তিতে ৩টি নতুন সাবষ্টেশন স্থাপন, ৬টি সাবষ্টেশনের মানোন্নয়ন ও ৩টি বে সম্প্রসারণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৬ টাকা। মেসার্স এনার্জি প্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ (২০১৮ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ)-এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জার্মানির আইএলএফ কর্তৃক ডিজাইন রিভিউ কাজ, চুক্তি বহির্ভূত নতুন কাজ এবং অতিরিক্ত ১২ মাসের জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  এতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান), আইন ২০১০ (২০১৮ সনের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘ইন্সস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়ি অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশে ডিপ পোস্ট ট্রেন্সিং পদ্ধতিতে পাইপলাইন স্থাপনের ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  এতে ব্যয় হবে ৪৭২ কোটি ৪২ লাখ ৬ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ এর আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে জাপানভিত্তিক টোকিও গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশনস করপোরেশন (টিজিইএস) এবং নিপ্পন কোই কোম্পানির সঙ্গে নেগোশিয়েটেড দরের চুক্তি সম্পাদনের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  এতে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি ৫ হাজার ২১৫ টাকা।

ডিসেম্বর ২০২০ সময়ে অতিরিক্ত মোগ্যাস (অকটেন ৯৫ আরওএন) আমদানির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান এই মোগ্যাস বা অকটেন সরবরাহ করবে।  এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এছাড়া ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন বাসমতি চাল আমদানি করার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৩৫ দশমিক ২৭ টাকা।  সে হিসেবে ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে খরচ হবে ২ কোটি ৮ লাখ ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশের ১৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ভারতের বীরভূম থেকে এসব চাল সরবরাহ করবে মেসার্স এমএসপিকে লিমিটেড।