জাতীয়

মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি, অবস্থান ১৩৩

জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে আরও দুই ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৩তম।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ‌্য জানানো হয়। 

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে ইউএনডিপি। এসব মানদণ্ডে এবার বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৩২, যা গত বছর ছিল শূন্য দশমিক ৬১৪।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন অসাধারণ। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মানব উন্নয়ন সূচক ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সূচকের মান মধ্যম সারির দেশগুলোর গড় মানের চেয়ে বেশি ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ধারাবাহিক উন্নতি করছে। কয়েক বছর ধরে দুই থেকে তিন ধাপ করে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে ১৩৯তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত বছর এক ধাপ এবং তার আগের বছর তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

এবার মানব উন্নয়ন সূচকে আগের বছরের মতো শীর্ষে আছে নরওয়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। এর পরে আছে—হংকং, আইসল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্ক। সবার পেছনে আছে গায়ানা, লাইবেরিয়া, গিনি বিসাউ, কঙ্গো ও নাইজার।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান। এ বছর শ্রীলঙ্কার অবস্থান এক ধাপ পিছিয়ে ৭২তম হয়েছে। মালদ্বীপ ১০৪তম থেকে ৯ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ভারত দুই ধাপ পিছিয়ে ১৩১তম ও ভুটান পাঁচ ধাপ এগিয়ে ১২৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পেছনে আছে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান। পাকিস্তান এক বছরের ব্যবধানে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৫৪তম, নেপাল ৫ ধাপ এগিয়ে ১৪২তম এবং আফগানিস্তান এক ধাপ এগিয়ে ১৬৯তম অবস্থানে আছে।

বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে করোনায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। প্রাণহানির পাশাপাশি মহামারিজনিত সামগ্রিক প্রভাব আরও অনেক বিস্তৃত ও প্রকট। বহু পরিবার জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র‌্যসীমার নিচে নেমে গেছে। আয় অসমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। লেখাপড়া থেকে দীর্ঘ বিরতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর মানুষের বিরূপ আচরণকে আমলে নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই এরকম একটি অতিমারির আশঙ্কা করছিলেন। এই সমীক্ষাটি আমাদেরকে দেখিয়েছে যে, পরিবেশসম্মত উপায়ে উন্নয়ন পরিচালনা করার অর্থ মানুষ বা প্রকৃতির মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া নয়, বরং একটি সমন্বিত কৌশল অবলম্বন করা।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।