জাতীয়

গণপরিবহনের ভাড়া বাড়লো ৬০ শতাংশ, শ্রমিকের কত?

গণপরিবহনে ভাড়া আবারও ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আসন সংখ‌্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে দ্বিতীয় দফায় ভাড়া বাড়ানো হলো। আগামীকাল বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে বেশি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। এ সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রযোজ‌্য বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। গত বছরও একইভাবে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এ সময়ে পরিবহন শ্রমিকদের বেতন কত শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকার সাময়িক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থায়ী সিদ্ধান্ত হলে, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহন প্রায় ৪৪ লাখ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ খাতে যুক্ত আছেন ৭০ লক্ষাধিক শ্রমিক।

পরিবহন শ্রমিকরা বর্ধিত ভাড়া আদায় করেন। তবে, বেশিরভাগ সময়েই নির্ধারিত সংখ্যার বেশি যাত্রী তোলেন তারা। ফলে, অনেক সময় চালকের সহকারীর (হেলপার) সঙ্গে যাত্রীর কথা কাটাকাটি বা হাতাহাতি হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে ৬৬ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত ২৩ মার্চ (২০২১) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ দাবি করেন।

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিন ঢাকাসহ সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এ হিসেবে পরিবহন খাতে মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।’

পরিবহন খাতে একটি কথার প্রচলন আছে—মালিক বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে, শ্রমিক বাঁচলে মালিক। তথ্য বলছে, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বেতন কাঠামো থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। সাধারণত সড়ক ও নৌ যোগাযোগ খাতে প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক মজুরি বা ট্রিপ-ভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান মোবাইল ফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা দুই সপ্তাহের জন্য। পরীক্ষামূলক। এক্ষেত্রে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে। যে হারে ভাড়া বেড়েছে, তাতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে মোট ভাড়া আগের সমপরিমাণ দাঁড়াবে। তাই শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’

গত বছরও একই প্রক্রিয়ায় ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। তবে, বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বেড়েছে কি? এ প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘না বাড়েনি। তবে, সরকারের কাছে শ্রমিকদের জন্য বেশকিছু প্রস্তাব দেওয়া আছে। অনেকে বলে, পরিবহন শ্রমিকদের বেতন কাঠামো নেই। এটি সঠিক নয়। বেতন কাঠামো আছে, তার বাস্তবায়ন নাই। এর কারণ—চালক ও সহকারী সকালে একজন বিকেলে আরেকজন, এভাবে চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মজুরি নির্ধারণ কঠিন হয়ে যায়। তবে যারা সারা মাস নিয়মিত আছেন, তাদের ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো অনুসরণ করা হয়।’   

ভাড়া বাড়ানোর ফলে যাত্রীদের সঙ্গে চালক ও হেলপারের বাকবিতণ্ডার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা অনেক ধৈর্য‌্যের পরিচয় দিয়ে থাকেন।’