জাতীয়

দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও বাসে গাদাগাদি, তবু ছুটছে মানুষ

করোনার কারণে দেশব‌্যাপী একসপ্তাহ লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের চাপ। তারা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ অর্থ দিচ্ছেন টিকিট কিনতে। তবে, বেশিরভাগ বাসই অর্ধেক সিট খালি রাখার নির্দেশনা  মানছে না। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাস ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি যাত্রী তুলছে। আর এসব বাসের বেশিরভাগ যাত্রীই মাস্ক ব‌্যবহার করছেন না।  বাসেও নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার।  রোববার (৪ এপ্রিল) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 

 দুপুর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এক ধরনের জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা পরিবহনগুলো। এই সব পরিবহন রাজধানীর সড়কে চলাচল করার কথা থাকলেও সুযোগ পেয়ে চলাচল করছে গাবতলী থেকে আরিচা রুটেও।  স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ভাড়া নিচ্ছে দিগুণ। 

গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তায় দেখা গেছে, গাবতলী-আরিচা রুটের বাসের পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচল করা বৈশাখী পরিবহনসহ বেশ কিছু পরিবহন গাবতলী থেকে আরিচা রুটে যাত্রী নিচ্ছে।  বাসের হেলপাররা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন। ১০০ টাকার ভাড়ার জায়গায় নিচ্ছেন ২০০ টাকা। 

কেন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে বৈশাখী পরিবহনের ড্রাইভার বলেন, ‘বাসের তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি। তাই যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আমরা তো জোর করে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারবো না। আর ঢাকা থেকে আরিচা যাত্রী নিয়ে গেলেও আসতে হচ্ছে খালি। তাই প্রতিটি সিটেই যাত্রী নিচ্ছি। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গেলে লস হবে।’

এভাবে ভিড় ঠেলে ঘরমুখো যাত্রীরা বাসে উঠছেন

এ বিষয়ে কথা হয় ফারুক হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাস টার্মিনালে এসে বরিশালের টিকিট কাটার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাইনি। বেশি টাকা দিয়েও চেষ্টা করেছি। কিন্তু দূরপাল্লার বাসগুলো অর্ধেক যাত্রীর বেশি নিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ভেঙে ভেঙে বরিশাল যাওয়ার চিন্তা করেছি। কিন্তু টার্মিনালের বাইরে এসে দেখি মানুষের চাপ অনেক বেশি। বাসে যেখানে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা, সেখানে আরিচার পরিবহনগুলো  শতভাগ নিচ্ছে। আবার ভাড়াও নিচ্ছে দ্বিগুণ। এজন্য বাধ্য হয়েই যাচ্ছি। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই।’

করোনার মধ্যেও এত ঝুঁকি নিয়ে কেন যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই যাত্রী বলেন, ‘লকডাউন কবে শেষ হবে তার কোনো ঠিক নেই। লকডাউনের সময়ও আবার বাড়তে পারে। কারণ দেশের যে অবস্থা, তাতে দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।  ঢাকায় থাকলে লকডাউনে গত বছরের মতো কষ্ট করতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে কথা হয় গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় নজর রাখছি। যদি কোনো পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি না মানে, তাহলে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যেতে পারছে না। অতিরিক্ত যাত্রী নিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করা যাত্রীরা জানান, দেশের লকডাউনের ঘোষণার পর মানুষ বাড়িতে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। পরিবহনগুলোও সুযোগ বুঝে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।