জাতীয়

‘ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ইলিশের উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

রবিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ব্র্যান্ডেড এবং পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সেরা মাছ ইলিশ উল্লেখ করে মন্ত্রী এসময় বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এটা আরো ব্যপক আকার ধারণ করবে। ইলিশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে আমরা প্রথম স্থানে রয়েছি। গত বছর আমাদের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার চমৎকার ব্যবস্থাপনা করেছে। জাটকা রক্ষায় ও মা ইলিশ আহরণ বন্ধে জলে, স্থলে ও আকাশপথে বিভিন্নভাবে মনিটর করা হচ্ছে। ইলিশের অভয়াশ্রমে জাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা কারেন্ট জাল, বেহুন্দী জালসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জাল তৈরি করে জাটকা নিধন করে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান ও জরিমানা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের সংবাদ বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম্বিং অপারেশনসহ বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইলিশ বেড়ে উঠার পথে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সেজন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো। এবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কর্মসূচি ০৪ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পালন করা হচ্ছে। ‘মুজিববর্ষে শপথ নেবো, জাটকা নয় ইলিশ খাবো’ -এ প্রতিপাদ্যে আমাদের এবারের কর্মসূচি। এ সময় ইলিশের অভয়াশ্রম সুরক্ষা এবং জাটকা নিধন বন্ধে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাটকা আহরণ বন্ধকালে ইলিশ আহরণে জড়িতদের যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য তাদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তাদের খাবারসহ অন্যান্য সমস্যা যাতে না হয় সেটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে এবছর ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ১৫ দিনে ১৭টি জেলায় মোট ৪৯২টি মোবাইল কোর্ট ও ১ হাজার ৬৮১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২ হাজার ৪৪৮টি বেহুন্দি জাল, ২৭৪.২ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৩ হাজার ২৫৫টি বেড় জাল, চরঘড়া জাল, মশারি জাল ও পাইজাল আটক করা হয়েছে এবং প্রায় ৯ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছি। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে আমরাও ন্যুনতম সমঝোতা করিনি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়েছে।’

এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত ৩ লক্ষ ১ হাজার ২৮৮টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৪৬ হাজার ৭৭৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ম কিস্তিতে ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৮১৫টি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে প্রদানের জন্য মোট ২৬ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, আমাদের মৎস্যজীবীদের পরিবারের কথাও মাথায় রাখতে হয়। ভিজিএফ সহায়তার পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার জেলেকে চাহিদানুযায়ী নানা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে।’

‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেউ যাতে জাটকা আহরণ করতে না পারে, আহরণের পৃষ্ঠপোষকতার জাল তৈরি করতে না পারে, ট্রলার চালাতে না পারে, ইলিশের অভয়াশ্রমে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখতে না পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি মাছের বাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কোনভাবে চোরাইপথে জাটকা আসলেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বরফ কল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের যে বিস্তৃত এলাকায় ইলিশ উৎপাদন হয় সব জায়গায় ভূমিকা রাখতে না পারলেও আমরা চেষ্টা করছি কোন প্রান্তেই যেন জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে কেউ জাটকা আহরণ করতে না পারে।’ -যোগ করেন মন্ত্রী।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।