রিয়া মনি। ফুটুফুটে, পরীর মতো দেখতে। দোকানের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো। রাস্তার ওপাশে তার মা চোখ রাঙাচ্ছিলেন। ঈশারাতে মেয়েকে বলছিলেন দোকানের মালিক মারবে। রাস্তার লোকেরা মারবে। কিন্তু আড়াই বছরের অবুঝ রিয়া মনি এসব বোঝে না। মা যতোই চোখ রাঙায় তার কান্না ততোই বাড়ে।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার রাইজিং গার্মেন্টের পাশে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আঙুল দিয়ে দোকানের দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলল, দুধ, দেয় না। খাবো, আমি খাবো। এই বলেই সে আরও কেঁদে উঠল।
বলছিলাম দরিদ্র রিকশাচালকের ঘরে বেড়ে ওঠা রাজকন্যা রিয়া মনির কথা। এই রিকশাচালকের নাম রাজা মিয়া। তিনি একজন প্রতিবন্ধী। বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনাতে। অভাবের তাড়নায় রাজা মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা চলে আসেন। মিরপুরে থেকে রিকশা চালানো শুরু করেন। রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন তা দিয়ে দুইজনের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজার সংসার বড় হয়। এক ছেলের পর ফুলের মতো মেয়ে আসে তাদের সংসারে।
এরই মধ্যে রাজার পেটে বড় টিউমার ধরা পরে। ধার কর্জ করে টিউমার অপারেশন করার পর তিনি আর আগের মতো খাটতে পারেন না। সংসারে অভাব আরও বাড়তে থাকে। ছেলেমেয়ের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য রাজা মিয়ার স্ত্রী ইয়াসমিনও মানুষের বাসায় কাজ নেন। এভাবে কোনোভাবে দিন তাদের যাচ্ছিল। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে রাজা মিয়ার রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে গেছে। ইয়াসমিনকেও বাসা বাড়িতে আর কাজে নেয় না।
রিয়া মনির মা ইয়াসমিন আক্তার ইতস্তত হয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী প্রায় ১৫ দিন থেকে ঘরে বসা। কাজ নাই। উনি অসুস্থ মানুষ। কোনো রকমে একবেলা রিকশা বাইলে পরের বেলা আর বাইতে পারেন না। আমাদের কোনো সঞ্চয় নাই। দিনে যা আয় হতো তাই দিয়ে চলতে হতো। কাজ না থাকায় ঘরে কোনো খাবার নাই। রোজা রাখবো যে, শেহরিতে কয়দিন ধরে তেমন কিছু খেতে পারি না। কিন্তু ছোট বাচ্চা তো এসব কিছু বোঝে না। দুধ আর খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। এই দোকান থেকে তাকে খাবার কিনে দেই। তাই এখানে এসে কাঁদছে। দোকানদার মামা ২১শ টাকার খাবার বাকি দিয়েছে। আর কতো দেবে? মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না।’
অসুস্থ রাজা মিয়া বলেন, ‘আমি অসুস্থ হলেও কোনো দিন ভিক্ষা করিনি। শরীর খেটে সংসার চালাই। কিন্তু কাজ না থাকলে কী করবো? অসুস্থতার কারণে একবেলা খাটতে পারি। এতে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। মহাজনকে ২০০ টাকা দেওয়ার পর হাতে যা থাকে তাই দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে সব বন্ধ। দুদিন রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ পিডায়ে তাড়ায়ে দেয়। এখন ঘরে বসা। কয়দিন হয় ঘরে খাবার নাই। দোকানদারও আর বাকিতে খাবার দিতে চায় না। কার কাছে হাত পাতবো? কে দেবে আমার ফুলের মতো বাচ্চাটার জন্য খাবার। আমি তো কারও কাছে চাইতে পারি না।’
রাজা মিয়া আরও বলেন, ‘কেউ যদি আমাকে একটা অটোরিকশা কিনে দিতো বা এমন কোনো কাজ দিতো যেখানে কায়িক পরিশ্রমটা কম হতো তাহলে আমি করতাম। কাজ করে ছেলেমেয়ে মুখে প্রতিদিন খাবার দিতাম। সমাজের ধনীদের কাছে আমার আকুতি, আমাকে একটু সহায়তা করেন। একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন। কাজ করে খেতে চাই।’
রাজা মিয়াকে সহায়তার জন্য বিকাশে ও নগদে 01762024828 (পারসোনাল) নম্বরে সাহায্য পাঠানো বা যোগাযোগ করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।