‘অনেক দিন হলো বাস বন্ধ। এই লকডাউনে সবই তো খুলে দিলো। শুধু গাড়ি বন্ধ। আমরা কীভাবে চলবো? আয় রোজগার নেই। কোনো জায়গা থেকে কোনো ধরনের সাহায্য পাইনি। এভাবে গাড়ি বন্ধ করে রাখলে করোনাতে নয়, না খেয়ে মারা যাবো।’
শনিবার (১ মে) সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কথাগুলো বলছিলেন পরিবহন শ্রমিক শফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি নোয়াখালীতে। বাড়িতে সবাই আছেন। ঢাকায় থেকে আয় করে বাড়িতে পাঠান। এখন সব বন্ধ। তাই বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু শফিকুল ইসলাম নয় তার মতো হাজার হাজার পরিবহন শ্রমিক করোনার কারণে চলমান বিধি নিষেধে বিপাকে পড়েছেন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, শত শত গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ গাড়ির মধ্যে বসে আছেন কেউবা আবার গাড়ি পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের দুর্দশা নিয়ে কথা বলছেন। কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, গাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তারা পালাক্রমে টার্মিনালে থাকেন। এজন্য দিনে গাড়ির মালিক ২০০ টাকা করে দেন। যা দিয়ে কোনো রকম চলছে।
লকডাউনে টিকতে না পেরে অনেক শ্রমিক অন্য পেশায়ও যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ ধান কাটতে গ্রামে গেছেন। আবার কেউবা রিকশা, লেগুনা, অটো চালাচ্ছেন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যশোরের বিপ্লব বলেন, ‘লকডাউন যে আর কতদিন চলবে? আমরা গরিব মানুষ। বাসা ভাড়া দিতে পারছি না। বাসার মালিকের যন্ত্রণায় টিকতে পারি না।’
এদিকে, সায়েদবাদ বাস টার্মিনালে রাখা প্রত্যেক বড় গাড়ির জন্য দিন ৮০ টাকা এবং ছোট গাড়ির জন্য ৬০ টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হয় বলে জানা গেছে। শ্রমিকরা বলেন, ‘মালিকের দোষ দিয়ে কী করবো। মালিকও তো নিরুপায়।’
শ্রমিক নেতা সুমন হোসেন ডাবার বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে আছি। শ্রমিকদের ঠিকমত টাকা-পয়সা দিতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে যে সাহায্য আসছে তা হাজার হাজার শ্রমিকের তুলনায় নগণ্য। বণ্টনেও হয়েছে অনিয়ম। স্টাফরা কষ্টে আছে। কেউ খবর রাখে না। গতবারের লকডাউনে তবুও অনেকে খোঁজ-খবর নিয়েছে। যা সঞ্চয় ছিল সেটা দিয়ে চলেছে। এবার সবার হাত শূন্য। অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করছে।’
তিনি বলেন, ‘জমজমাট এ টার্মিনাল এখন নীরব-নিস্তব্ধ। এভাবে আর কতদিন চলবে তা আমাদের জানা নেই। গাড়ির ব্যবসা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। আর কত লোকসান দিতে হবে।। প্রতিটি গাড়ি টার্মিনাল থেকে বের হতে লাগে সাড়ে ৮০০ টাকা। সড়কে ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়। বেড়েছে ডিজেলের দামও। সবকিছুই খোলা, শুধু গণপরিবহন বন্ধ। কষ্টের কথা ভয়ে বলতেও পারি না।’
এদিকে, রোববার গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন শ্রমিক নেতা বলেন, ‘বড় নেতারা বিক্ষোভে গেলে আমরাও যাবো। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশ পায়নি। নেতাদের কথার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’