জাতীয়

দুর্গতদের পাশে আ.লীগ ছাড়া আর কেউ নেই : প্রধানমন্ত্রী

দেশের যেকোনো দুর্যোগ-সংকটের মতো করোনাভাইরাসেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, এই দুঃসময়ে অন্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কোথায়?

রোববার (২ মে) দুপুরে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ভোলা, জয়পুরহাট এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে সবসময় দুর্যোগ দুর্বিপাকে সবার আগে ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটিই বিরোধীদলের কাজ। কিন্তু যারা নিজেদেরকে বিরোধীদল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি দিয়ে, আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সারা দেশের ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে।  রোববার (২ মে) উপকারভোগীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী এ উপহার পৌঁছে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন সারাবিশ্ব করোনা আক্রান্ত তখন খুব স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি সবকিছুতেই একটা ভাটা পড়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত দেশই হিমশিম খাছে। সেখানে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমাদের ছোট ভূখণ্ডে আমাদের অধিক জনসংখ্যা।  এই জনসংখ্যাকে একদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া, অপরদিকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তাদের জীবনকে সচল রাখার ব্যবস্থা, সেটা কিভাবে করা যায়, আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।

জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

‘সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে কিন্তু আওয়ামী লীগ আছে।  আপনারা দেখেছেন ধান কাটার অসুবিধা, আমরা ছাত্রলীগকে বলার সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেছে। কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ প্রত্যেকেই কিন্তু এই করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। লাশ দাফন করা অথবা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া।  ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেওয়া, সব কাজে কে আছেন এখন? আওয়ামী লীগ আছে আমাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মীরাই আছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর অন্যান্য কয়েকটা রাজনৈতিক দল।  অনেকেই ভালো শক্তিশালী বিরোধীদল চায়।  কয়টা দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছে? কয়টা মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে? কয়টা মরা মানুষের কাফনের কাপড় কিনে দিয়েছে। কেউ নেই? হ্যাঁ ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল। বেসরকারি খাতে প্রচুর টেলিভিশন রেডিও করে দিয়েছি। কয়েকটি মাত্র পত্রিকা ছিল, বেসরকারি খাতে অনেক পত্রিকা হয়ে গেছে।  এখন তারা বেশ ঘরে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন।

‘আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে।  যখন তাদের বুদ্ধি খোলে এবং পরামর্শ দেয় তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে নেন।  গরিবের কি দিতে হবে, মানুষের জন্য কি করতে হবে? করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে হবে কি না বা মানুষকে কিভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে; এসব কাজ যখন আমরা গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে আসি বা বাজেট আমাদের কিভাবে করব, বাজেটের কোন কোন খাতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দেব, এগুল যখন আমাদের করা শেষ হয়ে যায়? তখন তাদের বুদ্ধির দুয়ারটা খোলে এবং তারা আমাদের যে কাজগুলো সেগুলি আবার তারা আমাদেরকে পরামর্শ দেন।’

অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন, প্রতিদিন কিভাবে সরকার উৎখাত করবেন সেই চিন্তা করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পেয়েছে।  এই দেশটাকে কিভাবে উন্নত করতে হবে, এটা আওয়ামী লীগ জানে। আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে।

সমালোচকদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলেন, সরকার এটি করে নাই, ওটা করেনি সমালোচনা করছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন নিজে কটা লোককে সাহায্য করেছেন? তার একটি হিসাব পত্রিকায় দিয়ে দেন। তাহলে মানুষের আস্থা পাবেন, বিশ্বাস পাবেন। সেটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’

এ সময় করোনা সংকটে দেশের বিত্তবানতের সাধারণ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এই আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৩৬ লাখ ৫০ হাজার অসহায় মানুষকে জীবন ও জীবিকার জন্য আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা পাবে। এজন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিওরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর মাধ্যমে জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পার্সন) ভিত্তিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাবে প্রত্যেক পরিবার।