জাতীয়

‘বাবা নতুন জামা কিনে দিবা না’

ঈদ আসে ঈদ যায়। রং বদলায় সমাজের। নতুন জামা আর সেমাই, পোলাও, ফিন্নিতে ভরে ওঠে মানুষের ঘর। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসার বন্ধনের মহামিলন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই গড়ে উঠেছে সমাজ ব্যবস্থাও। তবুও কারো কারো জীবনে ঈদের দিনটাও একেবারে সাদামাটা। বলা যায়, অন্যদিনগুলোর চেয়েও বিষাদময়। সবাই যখন নতুন জামা পরে স্বজনদের সাথে ঈদগাঁয় বা মসজিদে যাবেন তখন নয়ন শিকদার চেয়ে চেয়ে দেখবেন আর একাকিত্বে সন্তানদের স্মরণ করবেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বিকেলে এই প্রতিবেদকের সাথে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় কথা হয় লকডাউনে চাকরি হারিয়ে রিকশা নিয়ে পথে নামা নয়ন শিকদারের সাথে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ছেলে-মেয়েগুলো ভাতের জন্য কান্নাকাটি করে। এক কেজি চালে কি আর ৭/৮ জনের পেট ভরে। কষ্ট পায়, রাতদিন কষ্ট করি। তবুও তিন বেলা খাবার দিতে পারি না। ঈদের দিন সেমাই-চিনি তো দূরের কথা ঠিকমত ভাত রান্না হয় কি না তা নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি।’

নয়ন শিকদার জানান,‘একটু আগে ছোট ছেলে ফোন দিয়ে বলে, আব্বা, কাল তো ঈদ। ঘরে কিছু নাই। নতুন জামা-কাপড় দিবা না। মাও সেমাই চিনি কেনে নাই। ছেলের একথা শুনে ডুকরে ডুকরে কাঁদেন নয়ন শিকদার। কি যে কষ্ট, তা একমাত্র ভুক্তভোগী বাবাই জানেন। ঈদ এলেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বার বার।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,‘জাহাজে মিস্ত্রীর কাজ করতাম। এখন রিকশা চালায়। সন্ধ্যার পর সবজি বিক্রি করি। থাকি রিকশার গ্যারেজে। যা আয়-ইনকাম হয় সব বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে মা, স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়ে, ছেলের বউ, এক নাতি আছে। তাদের সবার দায়িত্ব আমার ওপর। বড় ছেলে স্ট্রোক করে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। যতদিন বেঁচে থাকতে কাজ করতে পারবে বলে মনে হয় না।’

নয়ন শিকদারের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের বগা ইউনিয়নে। ৪৯ বছর ধরে জাহাজে মিস্ত্রীর কাজ করতেন। বেতনও তেমন ভালো পেতেন না। তাই কাজের বাইরে অন্য কিছুও করতেন। টাকা না থাকার অভাবে বাড়িতেও তেমন যান না। বছরে দুই একবার গেলেও নানা সমস্যার কারণে বেশিদিন থাকতে পারেন না।

নয়ন শিকদার আরও জানান, ‘দুর্ভাগ্য যেন আমার পিছু ছাড়ছে না। বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি। আশা ছিল, স্বামী সংসার নিয়ে সুখেই থাকবে। কিন্তু তার স্বামী ভবঘুরে। কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। মেয়েটাকেও আমাকে এখন দেখাশোনা করতে হয়।’