‘ঈদে বড়লোকরা গোস্ত রান্না করছে, ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে, সুন্দর সুন্দর জামা পড়ছে। আর আমরা খালি ভালো খাবারের ঘ্রাণ পাই, খেতে পাইন না। কত বাসায় গেলাম, সাহায্য চাইলাম, কেউ খাবার খেতে দেয়নি। ঈদে সবার বাসায় তো ভালো ভালো রান্না হয়েছে। সাহায্যের জন্য কয়েক বাসা থেকে টাকা পেলেও, খাবার দেয়নি কেউ’।
কথাগুলো বলছিলেন সাহেরা খাতুন। শনিবার (১৫ মে) ঈদুল ফিতরের পরের দিন সকালে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাইতে দেখা গেছে তাকে।
সাহারা খাতুন জানান, রাজধানীর সিপাহীবাগ এলাকার বস্তিতে মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন ষাটোর্ধ্ব বয়সের বিধবা সাহেরা খাতুন। আজ থেকে ৩০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে বরগুনা থেকে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ঢাকায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি তার একমাত্র মেয়ে নাসিমা বেগম স্বামী হারিয়েছেন। এখন বাধ্য হয়ে বাসাবাড়িতে কাজ করেই সংসার চালায় তার মেয়ে। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে দু-একটি বাসায় কাজ হারিয়েছে নাসিমা।
সাহারা খাতুন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বাড়িতে আমিও কাজ করতাম। বয়স হয়ে গেছে, এখন আর কাজ করতে পারি না। মেয়ে নাসিমার সংসারটা ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারে অভাব দেখা দেয়। পেটের তাগিদে বিভিন্ন বাসায় কাজ শুরু করে নাসিমা। করোনা সংক্রমণের পর থেকেই বাসা বাড়ির কাজ কমে গেছে। দু-চারটা বাসা কাজ করে যা রোজগার করত তা দিয়েই মা-মেয়ের সংসার চলত। লকডাউন শুরুর কিছুদিন পর দুইটা বাসা থেকে জানিয়ে দিয়েছে এখন আর কাজে আসতে হবে না। কাজ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে আমার মেয়ে। তাই সংসার চালাতে সাহায্য জন্য বের বের হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে আয়-রোজগার কমে গেছে। তিন বেলা ঠিকমতো খাবার ঢুকছে। মান-সম্মানের ভয়ে ভিক্ষা করতে পারছি না। তেমন উপার্জন না থাকায়, আধপেটা বা অনাহারে থেকেই দিন পার করছে করছি। ঈদের মধ্যে ভেবেছিলাম কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাব। কিন্তু তেমন পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি।