জাতীয়

‘ঝুঁকি স্বত্ত্বেও দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা শেখ হাসিনাকে সফল করেছে’

দেশের সংকটময় পরিস্থিতি, জীবনের ঝুঁকি আছে; এসব স্বত্ত্বেও দেশ গড়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতাই আজকে শেখ হাসিনাকে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রোববার (১৬ মে) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশেষ ওয়েবিনার ‘সেদিন শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) এর আয়োজন করে। ওয়েবিনার পরিচালনা করেন সুভাস সিং রায়।

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমীর হোসেন আমু বলেন, সব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে নিজের জীবনের ঝুঁকি, এই অবস্থায় তিনি দেশে এসেছিলেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তিনি সব হারিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। এজন্য তিনি সফল হয়েছেন।

বারবার তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে আনতে তিনি সক্ষম হয়েছেন, যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। আজকে হাতেগোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে নিজেকের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এটা জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের। শেখ হাসিনা ফিরে না আসলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, তা সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারনেই এগুলো সম্ভব হয়েছে।’

আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে এসেছিলেন বলেই সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা। নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছেন। এটা তার মূল প্রেরণার হিসেবে কাজ করেছে।’

শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন তখন ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ’র (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীনরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্যাতন করা হয়েছিল। ভুয়া মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানো হয়। যখন ক্ষমতাদখলকারীরা দেখলো যে আওয়ামী লীগ নেতা নির্ভর দল নয়, কর্মী নির্ভর দল, প্রতিবাদের জোয়ার তৈরি হচ্ছে; তখন তাদের ওপর সামরিক বাহিনী নামিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ কর্মীদের অস্ত্র মামলা দেয়া হলো। এভাবে প্রচুর আওয়ামী লীগের কর্মীকে, তৃণমুলের কর্মীদের পর্যন্ত জেলে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের ওপর এমন নিপীড়ন আনা হলো যে তারা দল থেকে বেরিয়ে অন্য দল করলো। আওয়ামী লীগ ব্রাকেটবন্দি হয়ে গেলো। এতে সারাদেশের কর্মীরা খুব হতাশ হয়ে গেলেন। কে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে? শেখ হাসি আসার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।’

শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের চিত্র তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এতো ত্যাগ, এতো লড়াই এর ইতিহাস পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক রাতে ১৮ জন সদস্য হারানো। তারপর নিজের দেশে ফিরতে না পারা।’

‘যেদিন দেশে আসলেন সেদিন তিনি কাদঁছিলেন। উপস্থিত সবাইও কাঁদছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাঙালির কাঁদার অধিকারও কেড়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে যে বাঙালি কাঁদতে পারেনি, সেইদিন মানুষ কেঁদেছে বঙ্গবন্ধু কন্যার উপস্থিতিতে। ৩২ নম্বরে কিন্তু তাকে সেদিন যেতে দেয়া হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি তাদের জন্য দোয়া করেছেন। আজকের প্রজন্ম সেদিনের ভয়াবহতা কিন্তু উপলব্ধি করতে পারবে না।’

 স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই ৪০ বছরে তিনি প্রতিটি মুহূর্তে সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে গেছেন তিনি বাধার মুখে পড়েছেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। সারাদেশে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। শত বাধার মুখেও গণতন্ত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বেই প্রতিটি নির্বাচনে একের পর এক জয়লাভ করেছে। তিনি জানেন কোন সময়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সত্তর বছর বয়সের তিনি একইভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।’ 

ফিরে এসে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করা তার চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সেই কাজে তিনি সফল হয়েছিলেন। ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। একই সঙ্গে দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়া তার প্রতিজ্ঞা ছিল।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা যেদিন দেশে পা রাখলেন সেদিনই মানুষ আশায় বুখ বেধেছিল, তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে, এবার আওয়ামী লীগ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। সব হয়েছে। নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তিনি গড়ে তোলার লক্ষ্য একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন।’