জাতীয়

‘সমাজে যাদের অবদান আছে তাদের পুরস্কার দেওয়া উচিত’

সমাজে অনেকে আছেন যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, তাদের নিজের কর্মের জন্য পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মেধা মনন কাজে লাগিয়ে এভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। জাতীয় জীবনে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল) ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি হাতে গোনা কয়েকজনকে পুরস্কার দিতে পেরেছি। কিন্তু এখনও আমাদের সমাজে অনেকে আছেন যাদের পুরস্কার দেওয়া উচিত। কারণ, তারা সমাজের বহুক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের পুরস্কৃত করা মানে, জাতিকে পুরস্কৃত করা, নিজেদের পুরস্কৃত করা।’

‘আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম উদ্ধুব্ধ হবে, নিজ নিজ কর্মস্থানে তারা নিশ্চয়ই মেধামনন কাজে লাগিয়ে যোগ্য একটা অবস্থান করে নেবে এবং দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছু অবদান রেখে যাবে। সেটাই আমরা চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না, একটি স্বাধীন জাতির স্বাধীন দেশের নাগরিক, যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে, তারা কীভাবে আবার পরাজিত শক্তির পদলেহন করতে পারে। এটা আমি ভাবতেও পারি না। কিন্তু সেই অবস্থাতেই বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

‘আজ এইটুকু বলতে পারি, যেটা সবসময় আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল- আমরা স্বাধীন জাতি, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা সবসময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব।  কারও কাছে হাত পেতে না, করুণা ভিক্ষা করে না।”

দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তার কন্যা বলেন, ‘একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশ যখন জাতির পিতা গড়ে তুলতে শুরু করেন তখন অনেক বিদেশি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এখানে তো কিছুই নেই, আপনি কীভাবে এই দেশ গড়বেন? তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে।  আমি এদেরকে নিয়েই এই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’ আমিও সেটাই বিশ্বাস করি যে, আমার দেশের মানুষ, দেশের মাটি— এটাই বড় শক্তি। আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।”

যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ’৭৫-এর পর সে আদর্শ হারিয়ে গিয়েছিল; সেই আদর্শকে আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর এমন একটা সময় ছিল যে, কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এ কথাটা বলতে সাহস পেত না।  মনে হতো সে যেন এক অপরাধের ব্যাপার ছিল।  আমাদের আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে হবে।  তাই আমি যখন সরকারে এসেছি, চেষ্টা করেছি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার।

‘আমরা জানি, বাবা-মা, ভাই হারিয়ে রিফিউজি হিসেবে থাকার কষ্ট।  আর মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা সবকিছু ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাদের পরিবার-পরিজনও নানাভাবে কষ্ট পেয়েছে। তাই তারা বংশ পরম্পরায় যেন সম্মানটা পায়, সেজন্য আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদের সেই সম্মানটা দিতে এবং যারা এখনও কষ্টের মধ্যে আছে তাদের কিছু সহযোগিতার চেষ্টা করছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সেদিন জাতির পিতার ডাকে যারা অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, তারা যদি সেই সাহসটা না দেখাতেন তাহলে কি আমরা স্বাধীনতা পেতাম? হয়তো সব ব্যর্থ হয়ে যেত। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আমাদের সেই মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।  জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল।’

এর আগে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।