জাতীয়

রেলের আওতায় আসবে সারা দেশ: প্রধানমন্ত্রী

যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে সরকার সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।  অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প খরচে যোগাযোগ স্থাপন ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে সমগ্র বাংলাদেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসছি। দেশব্যাপী রেল যোগাযোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।  যেসব এলাকায় রেললাইন নেই, সেসব এলাকায় রেল সংযোগ দিয়ে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে বিশেষ করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক্রমে রেলের সবগুলো যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে উদ্যোগ নেয়।  যার জন্য অনেকগুলো রেলওয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।  অনেকগুলো লাইন, স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়।  গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের অনেক অভিজ্ঞ লোককে বিদায় করে দেয়। পুরো রেলযোগাযোগ প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল তারা।

তিনি বলেন, আমরা সরকারে এসে বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ করি। সেইসঙ্গে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ হাতে নিই। জাতির পিতা যেভাবে সারা দেশে একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছেন; যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারে, অল্প খরচে চলাচল করতে পারে, পণ্য পরিবহন করতে পারে।

‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে রেলকে আমরা গুরুত্ব দিই।  অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা চলি না।  দেশটা কীভাবে চলবে, দেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন হবে, কীভাবে উন্নত হবে; আমরা সেটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।  আর সেভাবে গুরুত্ব দিয়েই সমগ্র বাংলাদেশে রেল যোগাযোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। যেন পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ হয়। এর মাধ্যমে মানুষ যেন সহজে চলাচল করতে পারে’, বলেন শেখ হাসিনা।

যমুনা নদীর ওপর ডেডিকেটেড রেলসেতু

যমুনা নদীর ওপর আরেকটা ডেডিকেটেড রেলসেতু হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এক সময় রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, তারাই আবার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে আরেকটা রেলসেতু করার জন্য। অর্থাৎ সেটারও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এর কাজ আমরা করে যাচ্ছি।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম হাই স্পিড ট্রেন লাইন করার চিন্তাভাবনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে সেটা আমাদের দেশের মাটি কতটা স্পিড লোড নিতে পারবে তার ওপর নির্ভর করে স্টাডি করে করবো।

দক্ষিণাঞ্চলে রেল সংযোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, সেখানে আমরা রেললাইন করছি।  পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙা, আবার ভাঙা থেকে একদিকে যেমন যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যোগাযোগ করবো, অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।  সেই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।’

নদীমাতৃক বরিশালে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘বরিশাল বিভাগকে একসময় বলা হতো বাংলার ভেনিস। অসংখ্য নদী-নালা খাল-বিল, বিশাল বিশাল নদী, সেখানে রেললাইন করার চেষ্টা করেও ব্রিটিশরা পারেনি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, স্টাডি চলছে। ব্রিটিশদের অনুরোধ করছি, তারা যেন রেলটা নির্মাণ করে দেয়।  সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশটাকে রেলওয়ের আওতায় নিয়ে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দিকে তাকায়নি।  অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছিল। নিজেদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে দুর্নীতিকে তারা নীতি হিসেবে নিয়েছিল।  আর বাংলাদেশের সব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছিল।  ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই আমরা প্রচেষ্টা চালাই জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার।

‘সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অন্য সবদিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিই। রেল, পরিবহন, নৌপথ, আকাশপথ সবগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিই। রেলওয়ে আলাদাভাবে একটা মন্ত্রণালয় করে দিই।  যাতে করে আলাদা বাজেট থাকে এবং রেলের উন্নতি হয়’, বলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।