জাতীয়

এনআইডি অন্য সংস্থার হাতে গেলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে: সিইসি

নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার অধীন ন্যস্ত করা হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হদা। 

রোববার (৩০ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেছেন। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্যক্রম আলাদাভাবে করা যাবে না। এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার হাতে গেলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে।  তাই এটি ইসির অধীনেই থাকা উচিত।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কেবিনেটের কাছে লিখিত যুক্তি তুলে ধরবো। এজন্য এনআইডি মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ মে নির্বাচন কমিশনকে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এসব চিঠি চালাচালির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসির সঙ্গে দুই দফা সাক্ষাৎ করেন। তাদের যুক্তি এনআইডি কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটাদান জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার সার্ভার নিয়ে তৈরি হবে সংকট। এছাড়া রাষ্ট্রের অর্থের বিরাট অপচয় হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, ক) সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রুল অব বিজনেস-১৯৯৬ এর রুল ১০ অনুসরণে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত ২ আগস্ট ২০১৮ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অবগত করা।

খ) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গ) সুরক্ষাসেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, (১) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষাসেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন্স’ এ সুরক্ষাসেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(২) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এ ‘নির্বাচন কমিশন’র পরিবর্তে সরকার শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

(৩) সুরক্ষাসেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন একটি তথ্যভাণ্ডার গতে তোলে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সংস্থাটি নাগরিকদের একটি পরিচয়পত্রও দেয়।  পরবর্তীতে এনআইডি অনুবিভাগ তৈরি করে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্পও হাতে নেয়। এজন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করে বর্তমানে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে দেশের সব নাগরিকদেন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ করে আসছে ইসি। সংস্থাটির তথ্য ভাণ্ডারে প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে।

এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠাম, মোবাইল অপারেটর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১৪০ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি যাচাই করে দিচ্ছে ইসি। আর এ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে ইসি।