জাতীয়

শরীরে শিকল-তালা, হাতে প্লেট নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ

একজনের শরীর দড়ি, শিকল-তালা দিয়ে প্যাঁচানো। তাকে পেছন থেকে টেনে ধরেছেন দুজন। অনেকের হাতে প্লেট, গামলা। যেন ছুটছেন খাবারের সন্ধানে। অভাব যন্ত্রণা ও কষ্টের এক চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা এই প্রতিবাদী মুখাভিনয়ের মাধ্যমে।

শুক্রবার (১১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কায়দায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস পরিষদ। ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প স্থায়ীকরণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন— গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস পরিষদ সভাপতি আতিক হাসান রাজা, সাধারণ সম্পাদক আপন খালিদসহ আরও অনেকে। জলি তালুকদার অবিলম্বে  ন্যাশনাল সার্ভিস পরিষদের দুই লাখ ৩৮ হাজার কর্মীর চাকুরী স্থায়ী করার দাবি জানান।

আপন খালিদ বলেন, ‘আমরা এখন বেকার। ঘরে খাবারও নেই। আমাদের জীবনটা শিকল আর দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। আবার পেছন থেকে কেউ টেনে ধরছে। এভাবে কী জীবন চলে?’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে ঘরে চাকরি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস নামক প্রকল্প ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধিনে চালু করা হয়। এ প্রকল্পে তিনমাসের প্রশিক্ষণ ও দুই বছরের কর্মসংযুক্তি প্রদান করে দেশের শিক্ষিত বেকার মানুষকে দিয়ে জাতি গঠনমূলক কাজ করাতে পারলেও দুই বছর যথেষ্ট সময় নয় বলেই এ প্রকল্প সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। একটি জাতি গঠনের জন‌্য কি শুধু দুই বছর প্রয়োজন পরে? দুই বছর পরেও জাতির জন‌্য গঠনমূলক কাজের প্রয়োজন হয়। সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের জীবন এখন সাধারণ দিনমজুর ব্যক্তির থেকেও অসহায়। যে দেশে একজন দিনমজুর দৈনিক কাজের মুজুরি পায় ৬০০-৭০০ টাকা সেখানে একজন শিক্ষিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীর প্রশিক্ষণকালীন দৈনিক ভাতা ১০০ টাকা এবং কর্মকালীন দৈনিক ভাতা ২০০ টাকা, যা একজন শিক্ষিত বেকারের জন্য এরচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন আর কি হতে পারে?’

আপন খালিদ জানান, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে ২ বছর অল্প টাকার বিনিময়ে কাজ করে একজন কর্মীর যেমন নিজের ক্ষুধা নিবারণ করা সম্ভব হয়নি, তেমনি তার পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণও ব্যর্থ হয়েছে। সরকার যে শুভ চিন্তা নিয়ে এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল, সেটি ব‌্যর্থ হয়েছে। দেশে বেকারত্ব দূর হবে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সর্বোপরি জাতি গঠন হবে— সরকারের এমন ভালো উদ্যোগ কিছু ভুল নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অদক্ষতার কারণে এ প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের নীতিমালা সংস্কার ও কর্ম কাঠামোর পরিবর্তন করলেই এই প্রকল্প সাফল্য পাবে।