জাতীয়

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর

গুলশানের হলি আর্টিজানে রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত জঙ্গীদের নৃশংস ও জঘন্য হত্যার শিকার হন দেশি-বিদেশি মিলে ২২ জন। পুরো দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গীদের আত্মসমর্পণের বারবার আহ্বান করলেও তারা পুরো রাত জুড়ে রেস্তোরাঁর ভেতর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হয়।

হামলাটি জঘন্য এবং পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, হলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিদের গ্রেফতার, তাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খবরা-খবর, অনেক জঙ্গী গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক একপ্রকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা সেদিনের মতো আর কোন হামলা করতে পারবে না।

সিটিটিসি'র তদন্তে বেরিয়ে আসে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলা কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রেস্তোরাঁয় হামলা করা হয়। এ দেশের  কিছু যুবক উগ্র মৌলবাদে বিশ্বাসী হয়ে জঘন্য এ হামলা করে। হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানি ৭ ও ১ জন ভারতীয়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেস্তোরাঁর ভেতর গুলি ও জবাই করে হত্যা করে  জঙ্গীরা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা গুলশানের নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত রেস্তোরাঁর চারদিকে  অবস্থান নেয়। গ্রেনেডের এবং গুলির শব্দে গুলশান-বনানীসহ আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে। রাতভর চলে জঙ্গিদের সঙ্গে আত্মসমর্পণের আলোচনা। কিন্তু কোনো কিছুতেই রাজি না হওয়ায় পরদিন পুলিশ, র‌্যাব, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সর্বোপরি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়। তারা হলো— রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খাইরুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল ওরফে বিকাশ। এর আগে জঙ্গীদের গ্রেনেড ও গুলিতে বনানী থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন ও সহকারি পুলিশ  কমিশনার  (এসি)  রবিউল ইসলাম নিহত হন।

ঘটনার পরপর দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মহলেও নজরে আসে ভয়াবহ এ হামলার ঘটনা। নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ ও প্রাথমিক তদন্তে আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করা হয়। অবশ্য হামলার পরপর জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে এবং নিজেদের মুখপাত্র ‘আমাক’ নিহত জঙ্গীদের ছবি প্রকাশ করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, হামলাটি মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তামিম আহমেদ চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, তানভির কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, আবু রায়হান তারেক, সরোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ মদ ফরীদুল ইসলাম, আকাশ ওরফে চকলেট ও ছোট মিজান। দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত শেষে  সিটিটিসি ২১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে বিভিন্ন সময় অভিযানে ১৩ জন মারা যাওয়ায় তাদের অব্যাহতি ও এ ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সন্দেহভাজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।  বিচার শেষে ২০১৯ সালের  ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ট্রাইবুনাল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

এদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও হামলার স্থান হলি আর্টিজানে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে এবার সীমিত পরিসরে এটি করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পাশাপাশি সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করা হবে।