জাতীয়

রাজধানীতে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর খামার

ব্রাহমা জাতের গরু পালন করলে লাভ বেশি। এতে অন্য গরুর তুলনায় অনেক বেশি মাংস পাওয়া যায়। খামারিরাও এই জাতের গরু পালনে আগ্রহী। তবে এই গরু পালন করতে গিয়ে বেশি দুধ দেওয়া গরুর পালন বন্ধ করে দেয় খামারিরা।

ফলে দেশে প্রয়োজনীয় দুধের চাহিদায় টান পড়ে। দীর্ঘমেয়াদী সংকটের কথা চিন্তা করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে উৎপাদন ও পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০১৬ সালে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর খামার গড়ে উঠেছে।

এ জাতের গরু পালনে খামারিদের অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, যেসব জাতের গরু দুধ বেশি দেয় সেগুলো পালন বন্ধ করে- খামারিরা মাংস বেশির জন্য সবাই ব্রাহমা জাতের গরু পালন শুরু করে। ফলে দেশে দুধের চাহিদা মেটানো যাচ্ছিল না। আর সে কারণে বাধ্য হয়ে ২০১৬ সালে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয় ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিমানবন্দরে ৩০টির মতো আমদানি করা গরু আটক করার পর জানা গেছে, আমদানি নিষিদ্ধ এই ব্রাহমা জাতের গরুগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনা হচ্ছিল। ব্রাহমা গরুগুলোকে ফ্রিজিয়ান জাত বলে ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হচ্ছিল। আইন বহির্ভূতভাবে আমদানি করায় গরুগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদিও এই ব্রাহমা জাতের উৎপাদন বাড়ার কারণে বাংলাদেশে মাংসের উৎপাদন বেড়েছে এবং চাহিদা মেটানো সহজ হয়েছে। এই জাতের গরু পালন সহজ ও লাভজনক। এদের শরীরে রোগ বালাইও অন্যান্য জাতের চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় অনেক খামারি এই গরু আমদানি করতে আগ্রহী।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা গরু বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে।

আমদানি নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীতে সন্ধান পাওয়া গেছে এমন একটি ব্রাহমা জাতের গরুর খামার। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ‘সাদিক অ্যাগ্রো’তে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই খামারে রয়েছে ব্রাহমা জাতের ৫২টি গরু। প্রতিটি গরুর ওজন ৮শ থেকে ১ হাজার কেজির মতো। কোরবানি উপলক্ষে একেকটি গরুর দাম ১৫-২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে বলে জানান খামারের লোকজন।

আমদানি এবং পালন নিষিদ্ধ এই জাতের গরুর বিষয়ে কথা বলার জন্য খামারের মালিক ইমরান হোসেনের সঙ্গে ফোনে ক্রেতা পরিচয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার খামারে ৫২টি গরু আছে। একেকটির দাম ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। চাইলে তিনি গরুর ভিডিও পাঠিয়ে দেবেন। অথবা সরাসরি গিয়েও দেখা যাবে বলে জানান ইমরান হোসেন।

এইগুলো কোন দেশের গরু? এসব গরু কিনলে শেষে কোনো সমস্যা হবে না তো? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ‘এগুলো বিদেশি গরু, তবে কোনো সমস্যা নেই।’ গরুর জাতের নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, এগুলো ব্রাহমা গরু। 

কিন্তু ব্রাহমা গরু তো প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ কথা শুনে ইমরান হোসেন ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর বার বার তার ব্যবহৃত গ্রামীণ নম্বরে কল করলেও তিনি আর কল ধরেননি। তার ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।