জাতীয়

কঠোর লকডাউনে গার্মেন্টসও বন্ধ, কী ভাবছেন মালিকরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যদিয়ে চলছে জনজীবন। বিগত সময়ে উৎপাদনমুখি কল-কারখানা খোলা থাকলেও এবারে তা’ থাকছে না। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিধি-নিষেধের মধ্যে খাদ্য পণ্য ছাড়া সব শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই অবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকের সুষ্ঠভাবে কাজে ফেরা ও উৎপাদন জটিলতার সম্ভাব্য সঙ্কট ও বিদেশি ক্রেতাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কারখানা মালিকরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- বিধিনিষেধ আগের চেয়ে কঠোর হবে। কল-কারখানা খোলার বিষয়ে চলতি মাসের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত আসছে না।

এদিকে- তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের নিবন্ধন ছাড়া করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে কার্যক্রমটি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারি শুরুর পরথেকে দেশের শিল্প খাতের শ্রমিকরা বেশি নিরাপদ ছিল। এবারের ঈদ ছুটিতে শ্রমিকরা গ্রামে গেছেন। দীর্ঘ মেয়াদি লকডাউনের ফিরতি যাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়া এবং সরকারের বিধি নিষেধ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও কারখানা খোলা সম্ভব হবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শ্রমিক শ্রম অঞ্চলে ফিরতে পারে। যার ফলে অন্য শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে নতুন করে কারখানার উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। ফলে সময়মত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি গতি হারাবে। ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিবে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বিধিনিষেধ আগের চেয়ে কঠোর হবে। মাঠে থাকবে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি এ সেনা সদস্যরা থাকবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অফিস আদালত, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। এ পর্যন্ত যত সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেভাবেই চলবে। যেহেতু মানুষের প্রয়োজন হবে না বাইরে আসার, আগে অফিস আদালতে যেতে হতো, গার্মেন্টস কারখানায় যেতে হতো, এবার তা হবে না। তাই গতবারের চেয়েও বিধিনিষেধ কঠোর থাকবে।’

তৈরি পোশাক কারখানা খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ্ মাসের মধ্যে আপাতত কোন সিদ্ধান্ত  নেই। অবস্থা পরিবর্তন হলে বিবেচনা করা হতে পারে। তবে এই মাসের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভবনা নেই। অবস্থা বুঝে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাইজিং বিডিকে বলেন, কারখানা খোলার অনুমতির জন্য আমরা (খাত সংশ্লিষ্টি ব্যবসায়ী সংগঠন) চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা অনুরোধ করেই যাবো- যাতে কারখানা খুলে দেয়া হয়। যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের শ্রম অঞ্চলে আসার ব্যবস্থা করা দরকার। এতে শ্রমিকদের টিকা কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাবে। তৈরি পোশাক খাত করোনা মুক্ত ও নিরাপদ থাকবে।  

ব্যবসায়ীদর মতে, কারখানা না খুলে যেসব সমস্যা হবে

-শ্রমিকরা গ্রাম থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরে অন্যদের আক্রান্ত করতে পারে।

-ফ্রি টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হবে।

-খ্রিস্টানদের বড় ধর্মীয় উৎসব কিসমাস ডে বা বড়দিন কেন্দ্রীক যেসব ক্রয় আদেশ রয়েছে তা সময়মত শেষ করা সম্ভব হবে না।

-উৎপাদন জটিলতায় ক্রেতারা রপ্তানি অর্ডার বাতিল করে অন্য দেশে চলে যেতে পারেন।

-ক্রেতাদের নিকট আস্থা হারাতে পারে বাংলাদেশ।

-আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে ড়বে দেশ।

-জুলাই মাসের বেতন দিতে দেরি হতে পারে বা বকেয় হতে পারে, ফলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

-কারখানা ব্যয় বাড়বে এবং সংযোগ শিল্পগুলোতে বেকারত্ত দেখা দিবে। সার্বিক সর্বরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।  

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রধান চিন্তার কারন হলো- শ্রমিক ও ক্রেতাদের নিয়ে। এর মধ্যে-েএতদিন পর্যন্ত  শ্রমিকরা করোনা আক্রান্তের দিক থেকে দেশে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থা থাকবে কিনা তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। অন্যদিকে সময়মত ক্রেতাদের পণ্য পৌছাতে না পারলে পশ্চিমা বিশ্বে বাজার হারাতে পারে তৈরি পোশাক খাত।”