জাতীয়

সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসফিল্ডের সন্ধান

দেশের ২৮তম গ্যাসফিল্ড পাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় এই নতুন গ্যাসফিল্ড পাওয়া গেছে।  

সোমবার (৯আগস্ট) জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘এনার্জি সিকিউরিটি: মডার্ন কনটেক্সট, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক এ এস এম মঞ্জুরুল কাদের। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান।

ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, জকিগঞ্জে গ্যাসফিল্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে। আগামী দেড় থেকে ২ বছরের মধ্যে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এই গ্যাসফিল্ড থেকে ১০-১২ বছর গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, যার মূল্য প্রায় ১২’শ কোটি টাকা। এখান থেকে দৈনিক এক কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে।

এদিকে বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, নতুন পাওয়া জকিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড থেকে সম্ভাব্য মজুত ধরা হয়েছে ৬৮ বিলিয়ন ঘনফুট।

এর আগে গত ১৫ জুন সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার আনন্দপুর গ্রামের ফায়ার স্টেশন লাগোয়া একটি কৃষি জমিতে গ্যাস পাওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। ১৬ জুন বাপেক্সের প্রতিনিধি দল সার্বিক বিষয় পরীক্ষা করার জন্য ঢাকা থেকে সিলেটে যান।

সূত্র জানায়, ১৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ক’পের মুখে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় বলা হয়, কূপে গ্যাসের চাপ রয়েছে ১১ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি)। কূপটিতে চার স্তরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।

বাপেক্স জানায়, গ্যাস ক্ষেত্রটিতে গত ১ মার্চ থেকে ৭ মে পর্যন্ত খনন কাজ করা হয়। মোট ১ হাজার ৯৮১ মিটারের একটি কূপ খনন করা। কূপের ২ হাজার ৮৭০ থেকে ২ হাজার ৮৯০ মিটার স্তরের মধ্যে এই গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এখন একটি কূপ খনন করলেও সামনে আরও দুই থেকে মোট তিনটি কূপে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সেমিনারে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাপেক্সকে ধন্যবাদ জানাই, তারা দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পেরেছে। এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে জ্বালানি বিভাগের যে টিম এই কাজ করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’ 

নসরুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময় গ্যাসকে জাতীয়করণ করে সেই গ্যাসের উত্তম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। আমি মনে করি এটা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘তেলের ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এলপিজির মাধ্যমে ৭৫ শতাংশ আবাসিক জ্বালানি আমরা পূরণ করতে পারছি। জ্বালানিতে আরেকটু নিশ্চয়তার জন্য ইতোমধ্যে তেলের জন্য সিঙ্গেল মুরিং পাইপলাইন শেষ পর্যায়ে। ঢাকা-চট্রগ্রাম পাইপলাইনের কাজও চলছে পুরোদমে। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত জেট ফুয়েল নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমরা তেলের টার্মিনালগুলো অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসছি।’ 

কোভিডকালে সর্বপ্রথম জ্বালানি বিভাগে ১০৫ শতাংশ এডিপি অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শক্তিশালী নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক থাকলে সবকিছু সম্ভব। আমি আশাবাদী আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো বড় বড় প্রজেক্ট আসছে। নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ীমূল্যে জ্বালানি দিতেই এগুলোর মাধ্যমে কাজ করা হবে। ঢাকা শহরসহ আশেপাশের এলাকায় পুরোনো পাইপলাইনগুলো উঠিয়ে ফেলব। আমরা ডিস্ট্রিবিউশনগুলো আরও আপডেট করতে চাই। আমরা কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় নিয়ে যেতে চাই। ইতোমধ্যে রংপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোর থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেকটি বড় শহরে গ্যাস কানেকটিভিটি তৈরি করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।’ 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘নতুন পাওয়া গ্যাস ফিল্ডে আমরা থ্রিডি সার্ভে করব এবং সেটার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সেখানে আরও তিনটি কূপ খনন করতে যাচ্ছি।’