জাতীয়

ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা

শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা কমেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এর প্রভাব দেখা দিয়েছে জনস্বাস্থ্যের ওপর। ফলে প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। আর এসব মানুষের মধ্যে শিশু রোগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। একই ধরনের চিত্র রাজধানীর হাসপতালেও দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর এমআর খান শিশু হাসপাতালের আউটডোর ঘুরে শিশু রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

এমআর খান শিশু হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে নবজাতক থেকে শুরু করে ৭-৮ বছরের অনেক শিশু ভর্তি রয়েছে। অনেক অভিভাবক হাসপাতালে বেড না পেয়ে আউটডোরে চিকিৎসক দেখিয়ে সন্তান নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ভর্তি হওয়া এবং ফিরে যাওয়া শিশুদের বেশিরভাগই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। 

তিনদিনের চেষ্টার পর এমআর খান শিশু হাসপাতালে নিজের ৬ মাস বয়সী সন্তানকে ভর্তি করাতে পেরেছেন মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মিতালী বেগম। গত এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডাজনিত কারণে তার মেয়ের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বুকের মধ্যে কফ জমে আওয়াজ হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায় তার মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন তিনি এই হাসপতালে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন ভালো চিকিৎসার জন্য।

সন্তানের চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থেকে ঢাকার এমআর খান শিশু হাসপাতালে এসেছেন কলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, `গত এক সপ্তাহ আগে আমার ছেলেটার ঠান্ডা লাগে। এরপর থেকেই সে কাশতে শুরু করে। সারা রাত ছেলেটা কাশে, ঘুমাতে পারে না। স্থানীয় চিকিৎসকদের দেওয়া ওষুধে তেমন কাজ না হওয়ায় তাকে ঢাকায় এনেছি। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছেন আমার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওকে এখানে ভর্তি করেছি। সে এখন একটু ভালো আছে।’ 

পাশের বেডে ভর্তি আছে রোকেয়া  নামের চার বছরের এক শিশু। সেও ৩ দিন থেকে এই হাসপাতালে রয়েছে। তার মা জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কাফরুলে। কয়েকদিন আগে শীত বেড়ে যাওয়ায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। চারদিন আগে রাতে তার জ্বর আসে। এরপর থেকেই জ্বর কমে আবার বাড়ে। এছাড়া ডায়রিয়া দেখা দেওয়ার ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। 

এমআর খান শিশু হাসপাতালের ভর্তি বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক সরকার জানান, গত ১৫ দিনে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ২৬৮ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া এক সপ্তাহে ধরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের প্রকোপ কমলে রোগী কিছুটা কমবে। আজও (বৃহস্পতিবার) আউটডোরে অনেক রোগী রয়েছে। আপাতত হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। 

রোগী হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর রাইজিংবিডিকে বলেন, `হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে নবজাতক ও শিশুরা নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আগে প্রতিদিন আউটডোরে ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী আসতো। এখন প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ জন পর্যন্ত শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে।’

তিনি আরো বলেন, `শীতের কারণে শিশুদের কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর হচ্ছে। পাশাপাশি ভাইরাসজনিত কারণে ডায়রিয়াও দেখা দিচ্ছে। এজন্য শীতের সময় শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাতে শিশুদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।`

অধ্যাপক ফরহাদ মনজুর পরামর্শ হিসেবে বলেন, `শীতের সময় নবজাতক ও শিশুদের কোনোভাবে ঘরের মেঝেতে বা সেঁতসেঁতে জায়গায় রাখা যাবে না। এ সময় সব শিশুদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। আর বড়দের সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।`