জাতীয়

ধুলাদূষণ বন্ধ ও জ্বালানির মান উন্নয়নের সুপারিশ

জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম হুমকি বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণ রোধে ধুলাদূষণ বন্ধ ও জ্বালানির মান উন্নয়নের সুপারিশ করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) ১৬টি সংগঠন।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এ সুপারিশ করেন পরিবেশবাদীরা।

মানববন্ধনে বলা হয়, বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। ধুলাদূষণ, ইটভাটা ও যানবাহনে নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। এতে ধোঁয়া বেশি হয় এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি ধুলাদূষণের কারণ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যান্সার, শুক্রাণুর ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, স্ট্রোকের ঝুঁকি, কিডনির রোগ, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক সমস্যা, হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা প্রভৃতি বাড়ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

দূষণের উৎস চিহ্নিত করে ধুলাদূষণ বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, নিম্নমানের কয়লা আমদানি বন্ধ এবং বাজারে যাতে নিম্নমানের  ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বিক্রি না হতে পারে, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনগুলো হলো—মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বিডি ক্লিন, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, গ্রিনফোস, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন, বানিপা, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন (জাসফা), পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মৃত্তিকা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, পরিস্কার ঢাকা, বারসিক এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা)।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন— সংগঠনটির চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাপরিচালক মাহবুল হক, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মেনন চৌধুরি, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র মো. ইমরান হোসেন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান লিটু, মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান, মৃত্তিকার সমন্বয়ক খাদিজা খানম, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির, গ্রিনফোর্সের সদস্য মো. ইসমাইল রাকিব প্রমুখ।

মানববন্ধনে বলা হয়, ঢাকায় বায়ুদূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ৬ মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণার মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় ২ বছর ৮ মাস, ২০১৯ সালে সেটি ৫ বছর ৪ মাসে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিন গুণ বেশি। বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অতি দ্রুত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা না নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

মানববন্ধনে ১৪টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো— ১. ধুলাদূষণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। ২. জ্বালানি তেলের মান ইউরো ফোর স্ট্যান্ডার্ড করা। ৩. নির্মল বায়ু আইনের খসড়া দ্রুত পাস ও প্রয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া। ৪. ইট তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও কম সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার করা। ৫. কলকারখানায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ৬. যানবাহন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত মানের জ্বালানি ব্যবহার করা। ৭. ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ৮. আইনানুগ দায়িত্ব আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করা। ৯. অবকাঠামো তৈরি, সম্প্রসারণ ও মেরামতের সময় খনন করা মাটি ও অন্যান্য সামগ্রী রাস্তায় ফেলে না রেখে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এবং দ্রুত রাস্তা মেরামত করা। এ কাজে ব্যর্থ হলে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। ১০. রাস্তা ও ফুটপাত নিয়মিত পরিষ্কার ও মেরামত করা। ১১. ভবন নির্মাণ ও মেরামত বা অন্য যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের সময় নির্মাণসামগ্রী ফুটপাত বা রাস্তার ওপর বা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় না রাখা। ১২. ধুলা সৃষ্টি করে এমন কোনো সামগ্রী (বালু, মাটি, ইট, পাথর) বহনের সময় সঠিকভাবে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা। ১৩. নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার পর আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে না রাখা এবং দ্রুততম সময়ে সরিয়ে নেওয়া। ১৪. ধুলাদূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ও বেসরকারি সংগঠন, গণমাধ্যম এবং সচেতন মহলের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।