‘করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অমর একুশে বইমেলা এবার মাসব্যাপী না হয়ে দুই সপ্তাহ হবে, এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য স্টল ভাড়াও কমে অর্ধেক করা হয়। আর এ কারণেই এবারের মেলাজুড়ে বসানো হচ্ছে না ইট।’- এমনটাই মনে করেন কাকলী প্রকাশনীর এ কে নাসির আহমেদ সেলিম।
তাম্রলিপির এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, মেলা কমিটির অজুহাতের সীমা নেই। ১৪ দিন মেলা হবে বলে এবার মাঠে ইট বিছানো হলো না। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তো, মেলাপ্রাঙ্গণ ‘গাবতলী গরুর হাট’ হয়ে যাবে। তাছাড়া মেলা যে ১৪ দিনই হবে, এটাও তো নিশ্চিত না। অনেক প্রকাশকের কাছ থেকে তো পুরো মাসের স্টল ভাড়াই নিয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মেলাপ্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, ৯০ ভাগেরও বেশি স্টল/প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে। মেলা কমিটি কেবল বাঁশ আর উপরে টিন দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। গত বছর উপরে ত্রিপল দিলেও এবার নিচে ইট আর উপরে ত্রিপল কোনোটি-ই দেয়নি।
ত্রিপল এবং মেলাপ্রাঙ্গণে ইট না দেওয়াসহ মেলার সার্বিক বিষয়ে জানতে মেলা বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদকে একাধিকবার কল করার পরও তিনি রিসিভ করেননি।
শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান সার্বিক মেলা বিষয়ে বলেন, গত তিন বছর মেলায় অংশ নিইনি, এবার নিয়েছি। আশা করছি, প্রকাশনা শিল্পের কথা বিবেচনা করে মেলার সময়সীমা ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়াবে। আর এবারের মেলা এত বিশাল জায়গাজুড়ে, এতটা পথ হেঁটে পাঠক তার পছন্দের বই বা প্রকাশনী খুঁজবে কি-না, সন্দেহ আছে। তাছাড়া, বৃষ্টি হলে মেলার মাঠের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। নিচে ইট দেওয়া হয়নি।
ঝুমঝুমি প্রকাশনীর তিথি বলেন, কারো কাছে অর্ধেক আবার কারো থেকে পুরো টাকা নিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলার সময়সীমা যদি না বাড়ে, যারা পুরো টাকা দিয়েছেন তাদের হিসাব কীভাবে সমন্বয় করবে? আর যদি সময় বাড়ে, তাহলে যারা অর্ধেক দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে কীভাবে টাকা নেবে? এসব ব্যাপারে একাডেমির সুস্পষ্ট কোনো নিয়মনীতি নেই।
এদিকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ মেলা পরিদর্শনে এসে সময় বাড়ানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, বর্তমানের মতো করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকলে মেলার সময় বাড়ানো হতে পারে।
পর পর দুই বছর বই প্রকাশিত হয়েছে লেখক রয় অঞ্জনের। তিনি জানান, পাণ্ডুলিপি রেডি থাকার পরও নানাবিধ দিক বিবেচনা করে এবার বই প্রকাশ করবেন না।
আরেক লেখক, গণমাধ্যমকর্মী গিয়াস আহমেদ এখনও দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন। জানালেন, এখনও ফাইনাল করিনি। তৃতীয় বই প্রকাশ করতে পারি, নাও পারি।
অপরদিকে লেখিকা বনানী রায় জানালেন, তার দ্বিতীয় গ্রন্থ এবার মেলায় আসবে। বর্তমানে ছাপাখানায় আছে। আশা করছেন, ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেলায় চলে আসবে।
মেলায় সিঙ্গেল স্টলের ভাড়া ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২০ ফুট বাই ২০ ফুট প্যাভিলিয়ন ১ লাখ ৫৩ হাজার এবং ২৪ ফুট বাই ২৪ ফুট স্টলের ভাড়া ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশকরা। এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ৫৪০ জন প্রকাশক।
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত নয়টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।