জাতীয়

নারী অভিবাসীদের খবর প্রকাশে শব্দ প্রয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ

অভিবাসন ও অভিবাসীর সমস্যা নিয়ে খবর প্রকাশ বা প্রচারের ক্ষেত্রে শব্দ ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞারা। 

তারা বলেন, ‘নারী অভিবাসীদের সমস্যা নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত বা প্রচারিত হচ্ছে, সেখানে এমন সব শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেগুলো ভবিষ্যত অভিবাসিদের মধ্যে ভীতি বা শংকা তৈরি করে। ফলে এ ধরনের খবর প্রকাশ বা প্রচারের সময় শব্দ প্রয়োগে আরও সতর্ক ও যত্ববান হওয়া দরকার।’ 

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) ও দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টার যৌথভাবে আয়োজিত ‘নারী অভিবাসীদের গণমাধ্যমে উপস্থাপন: একটি জটিল মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করে। 

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। অনুষ্ঠানে পারিবারিক ও সমাজ জীবনে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা, নারী অভিবাসীদের সমস্যা এবং তা নিয়ে প্রকাশিত খবরের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বক্তারা।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। 

এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কারিগরি উপদেষ্টা ইগোর বস, গবেষণা সংস্থা দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক থেরেসে ব্লঁশে, র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. আবু ইউসুফ, বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্টার আরাফাত আরা বক্তব্য রাখেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘সমস্যা আছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। আবার সমস্যাগুলো প্রচারেও আপত্তি নেই। কারণ সেগুলো সত্য। তবে সমস্যার পাশাপাশি আরও অনেক সত্য আছে। সাফল্য আছে। সেগুলোও প্রচার হওয়া দরকার।’ 

তিনি বলেন, ‘সব পর্যায়ে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সরকার, এজেন্সী, যিনি যাচ্ছেন সকলের দায়িত্ব আছে। সমন্বিতভাবে এই দায়িত্বপালন হওয়া দরকার।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে অভিবাসন নিয়ে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে যত খবর প্রকাশিত বা প্রচার হয়ে থাকে তাতে নেতিবাচক খবরই বেশি। প্রকাশিত বা প্রচারিত খবরের ৬৪ ভাগই নেতিবাচক। এরমধ্যে নারী অভিবাসীদের নিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদের ৭৯ শতাংশ এবং পুরুষদের ৬৭ শতাংশ নেতিবাচক।’

তিনি বলেন, ‘নারী অভিবাসীদের সমস্যা বিষয়ক সংবাদগুলোতে নির্মম আচরণ, পঙ্গু, দাসত্ব, যৌন নির্যাতন, ভয়ংকর নির্যাতন, ভাগ্যহীন, যৌন ব্যবসা, গায়ে আগুন দেওয়া, গরম পানি দেওয়াসহ আরও অনেক নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এসব শব্দের ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’ 

তিনি শব্দগুলো পরিবর্তন করে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করা যায় কিনা তা বিবেচনা করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. নাজনীন বলেন, ‘দেশে ভালো মেয়ে-মন্দ মেয়ের সংস্কৃতি রয়েছে। ফলে কাউকে নিয়ে একটি নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হলে সমাজে তার পরবর্তী জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তার নতুন করে হয়রানিতে পড়ার আশংকা তৈরি হয়। এছাড়া ভবিষ্যত অভিবাসীদের মধ্যে ভীতি বা শংকা তৈরি। এতে দেশের সুযোগগুলো নষ্ট হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।’

র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘নারী অভিবাসন নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি নীতি দরকার। আগামীতে প্রবাসী কর্মসংস্থানে নারীদের চাহিদা বাড়বে। ফলে প্রবাসে কর্মীর নিরাপত্তা, অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা প্রয়োজন।’ 

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সব খবর গণমাধ্যম প্রকাশ করবে। তবে সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হতে হবে ইতিবাচক। প্রকৃত ঘটনা বা তথ্য অবশ্যই প্রচার করতে হবে। তবে তার উদ্দেশ্য বা উপস্থাপনের ভঙ্গিতে যেনো পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।’

গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে যে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি নারী প্রবাসে যাচ্ছেন কাজের জন্য। এরমধ্যে ৬০ ভাগই যান সৌদি আরবে। ২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরব এক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে নারী অভিবাসী নিচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবেই নারী কর্মীদের অধিকার ক্ষুন্ন হয় বেশি। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত দারিদ্র ও কর্মসংস্থানের অভাবে বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, তরণীরা প্রবাসে যাচ্ছেন। 

এই গবেষণাটি দুটি ইংরেজি ও দুটি বাংলা সংবাদ পত্রে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত ৪৯৬টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে ৬৪ ভাগ খবরই নেতিবাচক ইস্যুতে করা হয়েছে। আর তিনটি টেলিভিশনের খবর বিশ্লেষন করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে ৮২ ভাগ খবর নেতিবাচক।