জাতীয়

হুমকির মুখে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ‘মসজিদের শহর’

বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর তালিকায় মসজিদের শহর বাগেরহাট এবার বিশ্বের ২৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে বিপন্ন ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে থাকা সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য এসব স্থানের তালিকা করেছে ‘ওয়ার্ড মনুমেন্ট ওয়াচ।’ 

১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি দুই বছর পরপর এই তালিকা প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ওয়াচ। সম্প্রতি তারা ২০২২ সালের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের একমাত্র স্থান হিসেবে বাগেরহাট জায়গা করে নিয়েছে।

মুসলিম ধর্মপ্রচারক খান জাহান আলীর হাত ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভৈরব নদীর তীরে বাগেরহাট শহরের গোড়াপত্তন। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা এবং ৩২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। 

এই শহরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনাসমূহের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগুনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, রণ বিজয়পুর মসজিদ, রেজা খোদা মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, খান জাহান আলী (রহ.) এর সমাধি, এক গম্বুজ মসজিদ, পীর আলী তাহেরের সমাধি, জিন্দা পীরের মসজিদ, জিন্দা পীরের সমাধি, সাবেক ডাঙ্গা প্রার্থনা কক্ষ, দশ গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলী (রহ.)-এর বসত ভিটা, বড় আদিনা ডিবি, খান জাহানের তৈরি প্রাচীন রাস্তা। সমৃদ্ধ প্রাচীন খলিফাতাবাদ (বাগেরহাট) শহরের এমন অসংখ্য স্থাপনার সময়ের সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। 

ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড (ডাব্লিউএমএফ) দ্বারা পরিচালিত একটি প্রকল্প ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ওয়াচ। বিশ্বজুড়ে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ভারসাম্যহীন পর্যটন ও কম প্রচারণার কারণে পিছিয়ে পড়ছে যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে  তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা দিতে এবং এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে প্রকল্পটি।

ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড বলছে, এবারের তালিকায় অসাধারণ তাৎপর্যপূর্ণ যে ২৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে তা ২৪টি দেশ এবং ১২,০০০ বছরের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে। 

সংস্থার ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এবারের তালিকা তৈরির জন্য ২২৫টিরও বেশি স্থানের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো। সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে এবারের ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের মসজিদের শহর বাগেরহাটকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকিতে থাকা সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য বিপন্ন ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তালিকায় থাকা অন্য ২৪টি স্থান হলো কলকাতার ‘চায়না টাউন’ খ্যাত টেরিবাজার, পাকিস্তানের লাহোরে মোঘল সম্রাটা জাহাঙ্গীরের সমাধি, লিবিয়ার ঐতিহাসিক বেনগাজি শহর, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামার আফ্রিকা টাউন, টেক্সাসের গার্সিয়া চারণভূমি, যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়েরর হার্স্ট কাসেল, লেবাবননের বৈরুতের ঐতিহ্যবাহী ভবন, অস্ট্রেলিয়ার কিনচেলার কিনচেলা অ্যাবোরিজিনাল বয়েজ ট্রেইনিং হোম, ক্যাম্বোডিয়ার মোনদুলকিরি প্রদেশের বুনোং জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ, চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের ইয়াংতাইয়ের দূর্গ-প্রসাদ। 

এছাড়াও তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সুম্বা দ্বীপ, নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার হিতিস (ঝরনা), সুদানের নুরি, বেলিজের ভারতীয় গির্জা গ্রাম- লামানাই, ব্রাজিলের মন্তে আলেগ্রে স্টেট পার্ক, বার্কিনা ফাসোর উয়াগাদুগুর লা মাইসন দু পিউপিল, মিসরের আবিদোস, ঘানার আসান্তে ঐতিহ্যবাহী ভবন, মালদ্বীপের কোয়াগানু মসজিদ ও সমাধিক্ষেত্র, মেক্সিকোর সান হুয়ান তিওতিহুয়াকানের তিওতিহুয়াকান, পেরুর মিরাফ্লোরেস জেলার ইয়ানাকানচা-হুয়াকিস সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ, পর্তুগালের লিসবনের মেরিন স্টেশনের (আলমাদা নেগরেইরোস মুরাল) ও আলকানতারা অ্যান্ড রোচা দো কোন্দে দে ওবিদোস, রোমানিয়ার তিমিসোয়ারার ফেব্রিক সিনাগগ ও তিমিসোয়ারার ইহুদি ঐতিহ্য, এবং ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ।