রাজধানীতে প্রয়োজনের সময় সিএনজি অটো পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। দশটা অটোকে বলার পর একটাও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে অনেক সময় রাজি হয় না। দৈবাৎ কেউ রাজি হলেও এমন দাম হাঁকবে, মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে গত দুদিন ধরে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোগুলো যাত্রীদের জন্য এই কাঠফাটা রোদে অপেক্ষা করছে। রাজধানীতে এখন যাত্রীর চেয়ে অটোর সংখ্যা অনেক বেশি।
গণপরিবহনের সংখ্যা এবং গুণগত মানের কারণে অনেক রাজধানীবাসীই সেসব এড়িয়ে চলেন। ভরসা কেবল রিকশা বা সিএনজি অটো। সেখানে যাত্রীরা তাদের কাছে একপ্রকার ‘জিম্মি’। বিশেষ করে ঈদ বা সরকারি ছুটির সময় অটো পাওয়া, পেলেও ২-৩ গুন ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। এ ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই যে!
সোমবার (২ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, এলিফেন্ট রোড, কমলাপুর, কাকরাইল, ফকিরের পুল, ফার্মগেট এলাকায় কয়েকশ সিএনজি অটো দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রী নেই। মার্কেটে যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই নিজেদের গাড়িতে। এ ছাড়া বড় একটা অংশ রিকশায়। ফলে অটোওয়ালাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত দুদিন থেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা খুব কম লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ সময় ঈদ ছুটির কারণে অনেকে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারেই ঢাকা ছেড়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে অনেকে আবার আগেভাগে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারপরও হঠাৎ ঈদযাত্রা বা কেনাকাটা করার জন্য বের হওয়া দু’চারটি পরিবার রাস্তায় দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অটোচালকরা।
কাকরাইল মোড়ে কথা হয় অটোচালক রাজু মিয়ার সঙ্গে। রংপুরের এই ভদ্রলোক গত ২৬ বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন রাজধানীতে। সংসারে মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। বাসা রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। দুঃখ করে বললেন, ‘বাবা এমন ঈদ জীবনে দেখিনি। রাস্তায় মানুষজন নেই। ভাড়াও নেই। সব মানুষ বাড়ি চলে গেছে। দিনের অটো ভাড়া ১১০০ টাকা, খরচ আরো ৫০০। গতকাল সব মিলিয়ে ১৯৫০ টাকা আয় করেছি। ৩০০-৪০০ টাকায় সংসার চলে? ছেলে মেয়েদের কিছু কিনে দিইনি। আজ দেখি আল্লাহ ভাগ্যে কী রেখেছেন!’
একই ধরনের কথা শোনালেন এলিফেন্ট রোডে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা অটোচালক আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টায় বেরিয়েছি। এখন দুপুর দেড়টা। মাত্র ৪০০ টাকা আয় হয়েছে। ভাড়া দিতে হবে ১১৫০ টাকা। গ্যাসসহ নিজের খরচ আছে। কীভাবে যে চলবো, জানি না।’ ঢাকা/এনএইচ