জাতীয়

ছয় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাবসহ ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮৫৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৬ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৩তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৭তম সভা হয়েছে।  অর্থনৈতিক কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটির  প্রস্তাবগুলোর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল।  এর মধ্যে গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। অর্থাৎ সভায় ৬ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১,৮৫৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৬ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১,৬৮০ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক হতে ঋণ ১৭৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ (২০২১ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২২ সালের ১৩তম) এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার (সিসিইএ) অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে দরপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এর কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ ২৫.৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কিনতে সর্বমোট ব্যয় হবে ৮৮৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৮৪০ টাকা।

তিনি বলেন, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১৮তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সংশোধিত চুক্তি করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৮তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার জন্য প্রাইস অফার দেওয়ার অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ১৮তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  প্রতি মেট্রিক টন ৬৭১ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা।

সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর-এ পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় ১টি পানি শোধনাগার নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চট্টগ্রামের মিরশ্বরাইয়ে প্রকল্পের আওতায় ৫০ এমএলডি ১টি পানি শোধনাগার নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৯টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে ৩টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান জেডএইচইসি, বিওডব্লিউ এবং  এসএমইডিআরআইসি, হংকং কে প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৮ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের গ্রীন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ ২৫তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে ৫টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ৮০ লাখ ২৫ হাজার ৫৭০ টাকা।

তিনি বলেন, সভায় ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (পতেঙ্গা হতে সাগরিকা)’ প্রকল্পের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (পতেঙ্গা হতে সাগরিকা) প্রকল্পের আওতায় ‘ফিডার রোড-১,৩ নির্মাণ এবং প্রকল্পের সৌন্দর্য বর্ধন’-এর পূর্ত কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড-এর কাছ থেকে ৩৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ১৬ হাজার ১৮৭ টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে পূর্ত কাজ বাস্তবায়নকালে কিছু টেন্ডাভুক্ত/নন-টেন্ডার আইটেম কম-বেশি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১০৮ কোটি ১৯ লাখ ২ হাজার ৩০৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়। সভায় ২টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘হেলথ অ্যান্ড জেন্ডার সাপোর্ট ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট’ অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বর্ণিত ক্রয়ে সম্ভাব্য ব্যয় হবে  ৩১ কোটি টাকা। এছাড়াও কাফকোর সঙ্গে চুক্তি নবায়নের একটি প্রস্তাবেও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।