জাতীয়

বুলিংয়ে অপূরণীয় মানসিক ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের

গত বছর অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজওয়াদ আহনাফ করিম। অভিযোগ ওঠে সে সহপাঠী-শিক্ষকদের বুলিংয়ের (অসৌজন্য-অশালীন আচরণ, উপদ্রব, নির্যাতন, উৎপীড়ন) শিকার হয়েছিল। আহনাফের মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন কারণে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে দেশে। যার কারণে বাড়ছে অ্যানোরেক্সিয়া ও বুলিমিয়ার মতো রোগ। ঘটছে আত্মহত্যারও মতো ঘটনাও।

আহনাফের মৃত্যুর পর সে সহপাঠী-শিক্ষকদের বুলিংয়ের (অসৌজন্য-অশালীন আচরণ, উপদ্রব, নির্যাতন, উৎপীড়ন) শিকার হয়েছিল কিনা, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কার্যত, এই সংক্রান্ত সমস্যা কমেনি, বরং বেড়েছে দেশে। এর সাথে যোগ হয়েছে অনলাইনভিত্তিক বুলিং। বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয়কে অপরাধের পাশাপাশি 'সামাজিক অন্যায়' বলেও অভিহিত করেন।

২০২১ সালের জুলাইয়ের আরেকটি ঘটনা। ভোলার চর ফ্যাশনের এক গ্রামের শিশু ঐশ্বর্য্য (ছদ্মন্মাম)। শৈশবে মাকে হারিয়ে বর্তমানে নানা-নানির কাছে রয়েছে। বাবা জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় থাকে।বাবার সাথে যোগাযোগ করার জন্য শিশুকে একটা মোবাইল দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন মোবাইল ব্যবহার করার এক পর্যায়ে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। ফোনের অপর প্রান্তে এক অপরিচিত ছেলে কণ্ঠ। উৎসুক হয়ে ছেলেটির সাথে কথা বলতে থাকে শিশুটি। কয়েক দিন কথা বলার একপর্যায়ে ছেলেটা শিশুকে বিয়ে করতে চাওয়ার শর্তে একটা ছবি চায়।শিশুটি ঐ ছেলেকে তার ছবি দেয়।কিন্তু ছেলেটা ছবি পাওয়ার পর থেকে তাকে ব্ল‍্যাকমেইল করতে থাকে। তাকে একপর্যায়ে শারিরীক সম্পর্ক করতে উৎসাহিত করতে থাকে এবং হুমকি দিতে থাকে। একদিন ছেলেটি বলে, ‌'যদি মেয়েটি আজ রাত ৯টায় ঐ ছেলের সাথে শারিরীক সম্পর্ক না করে তাহলে তার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দিবে'।

বিষয়টি শিশু আত্নীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিল না। সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এক বান্ধবীর কাছ থেকে শুনে সে ফোন করে বাংলাদেশ চাইল্ড হেল্পলাইনে (১০৯৮)। শিশুর কথা শুনে ভয়াবহতা লক্ষ্য করে শিশুর অনুমতিক্রমে স্থানীয় থানার ওসির সাথে শিশুকে কনফারেন্সে কথা বলিয়ে দেয়া হয়। সেদিনই অপরাধীকে আটক করা হয়। পরে শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য কাউন্সেলিং সেবা দেয়া হয়।

ঐশ্বর্য্যের মতো সবাই সচেতনতার অভাবে প্রতিকার পায়না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, মেয়েদের স্বাভাবিক বিকাশ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে বুলিং প্রতিকারের কোনো বিকল্প নেই।

বুলিং নীরব ঘাতক: বুলিং একজন শিশুকে মারাত্বকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত করে ফেলে। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। গবেষকরা বলছেন,শিশুদের যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন তা তাদের মানসিকতায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। অনেক সময় বুলিংয়ের শিকার কেউ কেউ আত্বহত্যা করতেও বাধ্য হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুলিংয়ের শিকার হয়ে শিশুরা সামাজিক বা শারীরিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা হারিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়,  গবেষণায় দেখা যায়, বুলিংয়ের কারণে কিশোর-কিশোরীরা অনেকেই আত্মহত্যা করছে। তারা জীবন থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে অথবা অনেকে নিজের জীবন ত্যাগ করে দিচ্ছে। ক্লাসে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে। মা-বাবা হারাচ্ছে তাদের আদরের সন্তান। জীবন থেমে যাচ্ছে এই অল্প বয়সেই। বুলিংয়ের এই সমস্যা বাংলাদেশসহ এশিয়াতে দিনে দিনে বেড়েই চলছে।ফলে শিশুরা সহজাত মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। সে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না, সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে না।  হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে, আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এবং নিজেকে অযোগ্য ভেবে মনে মনে কষ্ট পায়। শুধু তাই নয়, ভোক্তভোগী শিশু সামাজিক হতে পারে না, সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। দিন দিন অসামাজিক হয়ে গড়ে উঠে। তারা ভীরু মনের হয়ে পড়ে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক সময় সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের স্বীকার হয়।যার প্রভাব সারাজীবন ব্যাপী থাকে। জাতিগত বিদ্বেষ তৈরি হয়। অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। যে বুলিংয়ের ভিকটিম সে যেমন ক্ষতির শিকার হয়, তেমনি যারা বুলিং করে তাদের মধ্যেও নেতিবাচক মানসিকতা বৃদ্ধি পায়। জীবন থেমে যাচ্ছে কিশোর বয়সেই।

ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা যায়, শুধুমাত্র বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ শিশু বুলিংয়ের শিকার হয় এবং অধিকাংশই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, বুলিং অন্যদের অশালীন ও অমানসিক আধিপত্য ব্যবহার। এই আচরণ প্রায়ই পুনরাবৃত্তি এবং অভ্যাসগত হয়। বুলিংয়ের চরম মাত্রায় অনেক সময় দলবদ্ধভাবেও কারো ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটে, সেটাকে বলে মবিং। বুলিং অনেক ধরনের হতে পারে, শারীরিক, মৌখিক, সম্বন্ধযুক্ত, সাইবার-বুলিং, সমষ্টিগত, প্রতিবন্ধকতা, পারিবারিক ইভটিজিং, অ্যাডামটিজিং আরো নানা ধরনের। বুলিং একজন মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যখন ব্যাপারটা ঘটে, তখন তা বাচ্চাদের মানসিকতায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। অনেক সময় বুলিংয়ের শিকার কেউ কেউ সুইসাইডও করে ফেলে। বুলিং-এর শিকার হয়ে মানুষ সামাজিক বা শারীরিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা হারিয়ে ফেলে। এই ধরনের আধিপত্য, এই ধরনের আচরণের মাঝে সামাজিক শ্রেণি, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌন অভিযোজন, চেহারা, আচরণ, শরীরের ভাষা, ব্যক্তিত্ব, খ্যাতি, বংশ, শক্তি, আকার বা ক্ষমতা মানুষের ভিন্ন ধরন ও অন্যদের থেকে পার্থক্যগুলো থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়। বুলিং সমাজের একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা বুলিংয়ের কারণ হিসেবে হাই সেলফ এস্টিম, আগ্রাসী মনোভাব, ক্রোধ, বেড়ে ওঠার পরিবেশ ইত্যাদিকে দায়ী করেন। আমাদের বুলিংয়ের ব্যাপারে সচেতন এবং সোচ্চার হওয়া দরকার, যাতে নিজে বুলিংয়ের শিকার না হই এবং আমাদের সন্তানরাও বুলিংয়ের শিকার না হয়। যেখানেই বুলিং হবে সেখানেই প্রতিরোধ করতে হবে।

আরেক আতঙ্ক সাইবার বুলিং: আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বাস্তব জীবনের ঘটনা অপরাধগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে হস্তান্তরিত হচ্ছে। ফলে ভার্চুয়াল জগতের হয়রানির শিকার হওয়া-সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলো অস্বস্তিদায়ক। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে কারো ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন বা অন্যায় কোনো কিছুতে প্রলুব্ধ করা বা বাজে কোনো মন্তব্য করাই হলো সাইবার বুলিং। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমগুলোতে নানা বয়সি মানুষ সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হচ্ছেন। বিশেষ করে অনেকেই ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। যে কোনো বয়সি নারী এবং শিশুরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়।

সাইবার বুলিং বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও প্রয়োজনীয় নীতিমালার অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনলাইনে কী পরিমাণ মানুষ সাইবার বুলিং বা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয় তা বুঝতে দুটি বেসরকারি সংস্থা একটি জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৯ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহারকারী কোনো না কোনোভাবে সাইবার বুলিং বা সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদিকে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ‘সাইবার বুলিং অ্যাগেইনস্ট গার্লস অ্যান্ড উইমেন ওভার সোশ্যাল মিডিয়া’ শীর্ষক জরিপ বলছে, যৌন হয়রানিমূলক ভিডিও, বার্তা ও ছবির মাধ্যমে গ্রামে ৩৩ শতাংশ এবং শহরের ৬৪ শতাংশ মেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট গ্রুপের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশ করেছে। এটি একটি ৫১টি দেশের ওপর বৈশ্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারী নারীদের ৮৫ শতাংশ অনলাইনে সাইবার বুলিং বা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এ সহিংসতায় বিশ্বে এশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। এই জরিপে বাংলাদেশ থেকে ১০০ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট নারীর জন্য শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের শুরুতে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ বাংলাদেশে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইনে সহিংসতা, ভয়ভীতি ও উৎপীড়নের শিকার হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে। ১৪ শতাংশ ইন্টারনেটে পরিচয় হওয়া ‘বন্ধুদের’ সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯ শতাংশ শিশু ধর্মীয় উসকানিমূলক বিষয়বস্তুর মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছিল। ইউনিসেফ বাংলাদেশসহ ১৬০টি দেশে এ জরিপ পরিচালনা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, দেশে কম্পিউটার নলেজের ক্ষেত্রে অসমতা বিদ্যমান। ৪৪ শতাংশ পুরুষের ইন্টারনেট জ্ঞান রয়েছে, অন্যদিকে নারীদের এ হার ২৫ শতাংশ। টেকনিক্যাল জ্ঞানের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান বেশ দুর্বল। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অসমতা রয়েছে। ৩৬ শতাংশ পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে আর নারীদের এ হার ১৬ শতাংশ। এভাবে জেন্ডার ডিজিটাল ডিভাইডের জায়গাটা তৈরি হয়েছে, যা সত্যই উদ্বেগজনক।

প্রতিকারের অন্তরায় অসচেতনতা: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার নারীরা আইনের আশ্রয় নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ নারীদের ক্ষেত্রে পুরোই উল্টো চিত্র। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে সম্মানের ভয়ে বেশির ভাগ নারী তা প্রকাশ করতে চায় না। যে দু-একজন নারী সাহস করে ঘটনাগুলো প্রকাশ করে তারাও ঠিকঠাক বিচার পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সাইবার বুলিং বন্ধে দরকার পারিবারিক ও সামাজিক আন্দোলন। সেই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।

সাহায্য চাওয়ার মাধ্যম অনেক, কিন্তু প্রচারণা কম: বাংলাদেশ অনলাইনে সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা নেয়ার জন্য কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যালো সিটি অ্যাপ, রিপোর্ট টু র‌্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ এবং প্রতিটির ফেসবুক পেজেও অভিযোগ জানানো যায়। শিশুদের সহায়তায় ১০৯৮ নম্বরে, নারী ও শিশুদের সহায়তায় ১০৯ হটলাইনে ফোন করেও সেবা নেয়া যায়। কিন্তু অনেকেই বিষয়গুলো সর্ম্পকে জানেনা। তাই এসব বিষয়ের আরো বেশি প্রচারনা দরকার বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

প্রতিরোধে আইনে কী আছে: ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৪ ধারাতে উল্লেখ আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত (অন্তরঙ্গ) ছবি তোলে ও প্রকাশ করে তাহলে তিনি ১০ বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২২ পর্যন্ত ২৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়। প্রথম ১৫ মাসে গড়ে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরবর্তী ৯ মাসে গড়ে ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে। এই সময়ের মধ্যে আসামিদের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩২ জন করে ৮৪২ জনকে আটক করা হয়। এসব মামলার মধ্যে প্র্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়। এই আইনের প্রথম রায় হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। রায়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে ৮ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

পরিবারের ভূমিকা মূখ্য: বুলিংকারীরা মূলত শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে থাকে। যার ফলাফল শুরুতে বন্ধুসুলুভ আচরণ করে। এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে। সাধারণত বুলিংকারীরা মানসিক অত্যাচার করে থাকে। তবে তা মাঝে মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পথেও ধাবিত হতে পারে। অবুঝ ছেলেমেয়েরা অনলাইনের অন্তরালের বন্ধুকে আপন মনে করে। এবং নির্দ্বিধায় সব ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বসে। ফলে যখন অন্য পাশের মানুষটার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে, তখন তারা ভীত হয়ে পড়ে। এবং ভয়ে কারো কাছে এ ব্যাপারে কিছু শেয়ার করতে চায়না এবং সর্বদা আতঙ্কে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে ফাঁকে অবশ্যই সন্তানকে সময় দেয়া উচিত পিতামাতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। সন্তান অপরিচিত কারো সাথে কথা বলছে কি না এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে। তার সাথে বন্ধুর মত মিশে সব কিছু জানা জরুরী। কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং আবেগী হয়ে থাকে। সন্তানকে সাইবার বুলিংয়ের কুফল সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে অপরিচিত কোনো মানুষের কাছে কখনোই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া যাবেনা, অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, ভার্চুয়াল জগত বাস্তবজীবন থেকে অনেক বেশি অনিরাপদ।