জাতীয়

জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি ক্যাবের

করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে বাজারে জিনিসিপত্রের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সোমবার (২০ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির এ দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্তত এই সময়ে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াবেন না। এমনিতেই করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক দফায় জিনিসের দাম বেড়েছে। নতুন করে বন্যায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে মানুষের। এ অবস্থায় ভোক্তাদের স্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এম সামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি চার দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হচ্ছে—কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের মাধ্যমে বিপিসির আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরল জ্বালানি ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় নিবিড় পর্যালোচনা করা। জ্বালানি খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব লাইসেন্সধারীর পরিচালনা বোর্ড তথা প্রশাসন থেকে জ্বালানি বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাকে অবমুক্ত করা ও এসব কর্মকর্তার মাধ্যমে লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে নেওয়া আর্থিক সুবিধা অবৈধ হওয়ায় সব অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায় করা। বিইআরসি আইন লঙ্ঘন করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য নির্ধারণের অপরাধে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সচিব-সিনিয়র সচিব (ভূতপূর্বসহ) এবং বিপিসির চেয়ারম্যানদের বিইআরসি আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আনা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেলের মূল্য অবৈধ উপায়ে আবারও বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অতিসত্ত্বর সে সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে। দিনে ৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমানোর অজুহাতে তারা পরিবহনসহ ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় শত শত কোটি টাকা বাড়াবে। ফলে, ভোক্তারা এখন অতিমাত্রায় আতঙ্কিত এবং দিশেহারা।

বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সবার। ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরপেক্ষ অডিট করানোর দাবি করে আসছে। বিইআরসি আইনের ২২ ও ৩৪ ধারা মতে এলপিজিসহ সব পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেসঅয়েল ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসির। ২৭ ধারা মতে বিপিসি বিইআরসির লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। ৩৪(৬) ধারা মতে যেকোনো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি/পরিবর্তনের প্রস্তাব লাইসেন্সধারী হিসেবে বিপিসিকে বিইআরসির কাছে পেশ করতে হবে এবং ৩৪(৪) ধারা মতে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানি দেওয়ার পর বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করবে। বিইআরসির আইন অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ হওয়ায় এলপিজির মূল্য এখন বিইআরসি নির্ধারণ করে। তাতে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্সধারীরা সিলিন্ডার প্রতি কমপক্ষে গড়ে দেড়শ টাকা বেশি নিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার ভয়ানকভাবে বিপর্যস্ত। এমন দৃষ্টান্ত কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। তাই এমন পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন দরকার।