জাতীয়

পদ্মা সেতু নিয়ে তখন কে কী বলেছিলেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম‌্য ইচ্ছা শক্তি আর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তবে এই সেতু বাস্তবায়ন সহজ ছিলো না। ছিলো নেতিবাচক বক্তব‌্য, দুর্নীতির মিথ‌্যা অপবাদ এবং নিরৎসাহিত করার মতো মন্তব‌্য। তবে সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু। জবাব দিয়েছে সবকিছুর। তখন পদ্মা সেতু নিয়ে যে যা বলেছিলেন… 

২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করলো।

তিনি ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।

২০১২ সালের ১ জুলাই ড. আকবর আলি খান বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোনো দাতা সংস্থা কোনো নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি যে আমাদের পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নের ধারাকে নষ্ট করছে, এই ঘটনা তারই আরেকটি উদাহরণ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আলী আহসান মনসুর বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগকে ‘দুঃখজনক ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প আজ অনিশ্চয়তার মুখে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিকল্প উৎস হতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা (দুর্নীতির অভিযোগের ওপর থেকে) দৃষ্টি সরানোর উপায় বলে মনে হতে পারে। যদি এই সিদ্ধান্ত সফলও হয় তাতেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না।

২০১২ সালের ১০ জুলাই বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশ্ব ব্যাংক সুনির্দিষ্টভাবে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে- প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী।

আরেক নেতা প্রয়াত এমকে আনোয়ার বলেন, নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই।

২০১২ সালের ২৩ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেতে বলা হয়, অভিযোগ ওঠার দশ মাস পর যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ এটাই প্রমাণ করে যে এই প্রকল্পে আসলেই দুর্নীতি হয়েছে।

২০১২ সালের ২৪ জুলাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবুল হোসেনের পদত্যাগ এটাই প্রমাণ করে যে দুর্নীতির সকল অভিযোগ সত্য। তিনি যদি আরও আগেই পদত্যাগ করতেন তাহলে (বিশ্ব ব্যাংক) ঋণচুক্তি বাতিল করতো না।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখন অনেক দেরি হয়ে গেলো। কয়েক মাস আগে বিশ্ব ব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনলো তখনই (পদত্যাগ) হওয়া উচিত ছিল।

ড. আকবর আলি খান বলেন, অনেক দেরিতে আসলো এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল।

২০১২ সালের ২৮ জুলাই  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আবুল হোসেন কোন দেশপ্রেমিক নন, তিনি একজন নির্লজ্জ ব্যক্তি। তাই, তিনি বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ আসার  ১০ মাস পরে পদ ছেড়েছেন। একজন দুর্নীতিবাজের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী এতদিন সাফাই গেয়েছেন।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব) এএসএম হান্নান শাহ বলেন, শেখ হাসিনা একজন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী। তারও উচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, আবুল হোসেন যদি দেশপ্রেমিক হয় তাহলে দেশপ্রেমিক নয় কে? তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন এটাই প্রমাণ করে যে জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারীদের রাজনৈতিক দলে থাকার অধিকার রয়েছে।

নাগরিক ঐক‌্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী কাউকে দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট দিতে হবে আর কেনইবা সেটা লন্ডন গিয়ে করতে হবে? প্রধানমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী যোগাযোগমন্ত্রীর যদি আত্মসম্মানবোধ থাকতো তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার সাথে সাথেই তিনি পদত্যাগ করতেন।

২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠা সত্ত্বেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।

২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আলি ইমাম মজুমদার বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে দুদক নিজেদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দুদক যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতো তাহলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতো না। উন্নয়ন সহযোগীদের পাশাপাশি দেশের জনগণও দুদকের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা আশা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহ উদ্দীন বলেন, নিজ অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করার যে পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সরকার ইচ্ছা করলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবে; কিন্তু শেষ করতে পারবে না।

আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, পদ্মা সেতু দেশি অর্থায়নে হবে না, সম্ভব নয়।

২০১২ সালের ১ জুলাই পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারলেও শেষ করার গ্যারান্টি থাকবে না।... এই মুহূর্তে সরকার নিজস্ব অর্থে করতে গেলে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে এবং টাকার মান ব্যাপকভাবে কমে যাবে। বাড়বে অযাচিত মুদ্রাস্ফীতি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, যা জোগান দিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে। এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না।... তবে এজন্য তাদেরও ভয়ঙ্কর নতুন সমস্যায় পড়তে হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু শুরু করা হলে দেশের অন্যসব অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করা যেত সেগুলো আর হবে না।