জাতীয়

অগ্রিম টিকিটের শেষ দিনে লোকে লোকারণ্য কমলাপুর

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষদিন আজ মঙ্গলবার (৫ জুলাই)। এদিন ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। টিকিট পেতে তাই কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রতিবছরের মতো এবারো বাড়ির দিকে ছুটছেন লোকজন। তাই 'সোনার হরিণ ট্রেনের টিকিট' পেতে রীতিমত যুদ্ধ চলছে। গরমের মধ্যেও দীর্ঘ ২০-২২ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও অনেকে টিকিট না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে। আবার অনেকে টিকিট পেয়ে আনন্দে উচ্ছাসিত। এছাড়া টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনা নিয়েও অনেক যাত্রী বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরছেন।

লালমনিরহাটগামী যাত্রী সোহান বলেন, ‘সোমবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যার পরে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সারা রাত এখানে শুয়ে বসে কাটিয়েছি। সকালে লাইন পেরিয়ে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছানোর পরও টিকিট পাইনি। অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই কী করে জানি সব টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন সড়ক পথেই যেতে হবে। কত সময় যে লাগবে, আল্লাহ ভালো জানেন।’

বগুড়ার যাত্রী শিহাবুল বলেন, “সহজ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট পাচ্ছি না। এদিকে 'রেল সেবা অ্যাপও' কাজ করছে না। তাহলে আমরা টিকিট পাবো কিভাবে? এতো কষ্ট করে গরমে-ঘামে প্রায় ১৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পেলাম না। এখন বাসই ভরসা।”

এদিকে যাত্রীদের অনেকেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে বেলে অভিযোগ করেছেন। 

কালোবাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিকভাবে কালোবাজারিদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সোমবার  রাতে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এদের কাছে বেশ কয়েকটি রুটের টিকিটের পাশাপাশি অত্যাধুনিক মেশিনে ফটোকপি করা টিকিটও পেয়েছি।’

অপরদিকে চাহিদা মতো চারটি টিকিট পেয়ে খুশি মিলন আহমেদ। পরিবার নিয়ে তিনি যাবেন রংপুর। তিনি বলেন, ‘সোমবার দুপুরের পরই এসে টিকিটের জন্য লাইন দিয়েছি। পালা করে আমি এবং আমার ভাই লাইনে ছিলাম। সারা রাত জাগার কষ্ট সার্থক হয়েছে। তবে মানুষের কারণে অতিরিক্ত গরম। স্টেশনের ফ্যানগুলোর দিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়ার করছি।’

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই সোমবার (৪ জুলাই) দুপুর থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।

শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১ জুলাই দেওয়া হয় ৫ জুলাই এর ট্রেনের টিকিট, ২ জুলাই দেওয়া হয় ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই দেওয়া হয়েছে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। সোমবার জুলাই দেওয়া হয় ৮ জুলাইয়ের টিকিট এবং আজ (মঙ্গলবার) ৫ জুলাই দেওয়া হচ্ছে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।

এছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের টিকিট, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ১০ জুলাই ঈদ হলে ১১ জুলাই সীমিত কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। তবে ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলাচল করবে।

ঢাকায় ছয়টি স্টেশন ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট এবং কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তেজগাঁও স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।

এছাড়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেসের টিকিট। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে।