রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে। বেড়েছে পণ্যমূল্য, বাড়ছে সামাজিক অপরাধও।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ৪র্থ যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই তথ্য তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় সাংবাদিক মাসুদ কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, এসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিস এর সভাপতি রফিকুল হোসেন কাজল, এসএমই ওনার এসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী প্র. মোজাহেরুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মনজুর হোসেন ঈসা, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম. মনিরুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত ১ বছরে দুই বার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে উঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনও পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে ২৫ যাত্রীকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০ যাত্রী। এতে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রী সাধারণের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়। এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপকমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে।
পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, জাইকার সমীক্ষানুযায়ী রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। গত এক বছরে দুই দফা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরে গণপরিবহনে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য থামাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। কোনও কোনও পরিবহনে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের দৈনিক জমা, জ্বালানি উচ্চমূল্য, সড়কের চাঁদাবাজি, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এমন ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, রাজধানীতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহন।
ওয়েবিলের নামে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিস, গেইটলক সার্ভিস বন্ধসহ এসময় ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।