জাতীয়

দ্বিগুণ হচ্ছে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি

দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি দ্বিগুণ হচ্ছে। আর এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের ৩৬২ কোটি টাকা বেড়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, বিমানভাড়া, ডলারের সঙ্গে টাকার মান কমে যাওয়াই মূল কারণ। এছাড়া ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল প্রস্তাবে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ এমআইইউ (৬.৬ টিবিপিএস)। এটি বাড়িয়ে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটির লক্ষ্যমাত্রা ২ এমআইইউ (১৩.২ টিবিপিএস) করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, এসএমডব্লিউ-৬ বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে কোর অংশে আট জোড়া ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তী সময়ে খরচের সুবিধা বিবেচনায় ১০ জোড়া ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল ক্যাপাসিটি ইনিশিয়াল লাইট-আপ-এর জন্য ১০ লাখ ডলার ব্যয় বাড়ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়ার কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এ-সংক্রান্ত প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মূল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিএসসিসিএল-এর অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সংশোধনী প্রস্তাবে সরকারি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াচ্ছে ৪৭৬ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বিএসসিসিএল-এর অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াচ্ছে ৫৭৯ কোটি টাকা। মূল প্রস্তাবে প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে সময়সীমা এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের ক্যাবল রুট হচ্ছে কক্সবাজার থেকে এক দিকে সিঙ্গাপুর এবং অন্য দিকে ফ্রান্স পর্যন্ত। সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সি-মি-উই-৬ সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। কক্সবাজার ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে।

জানা গেছে, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসসিসিএল সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সেবা দিয়ে আসছে। দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডব্লিউ-৪ ২০০৫ সালে এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডব্লিউ-৫ ২০১৭ সালে চালু করা হয়। ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে বর্তমানে বিএসসিসিএল-এর মার্কেট শেয়ার প্রায় ৬০ ভাগ। বিএসসিসিএল ও আইটিসি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ছে। আগামীতে এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ আরও বাড়বে।

সূত্র জানায়, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের কথা বিবেচনা করে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটির লক্ষ্যমাত্রা ১ এমআইইউ (৬.৬ টিবিপিএস) থেকে বাড়িয়ে ২ এমআইইউ (১৩.২ টিবিপিএস) করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যয়ও প্রায় ৫২ শতাংশ বাড়ছে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা