জাতীয়

সরকারকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দিয়ে বিল পাস

সরকারকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ বিল জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে।

বর্তমান প্রক্রিয়ায় ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয় (মূল্য বৃদ্ধি) এবং প্রচলিত আইনে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মূল্য নির্ধারণে সময় বেশি লাগে। তাই, দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের (মূল্য বৃদ্ধির) লক্ষ্যে সরকারের ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

তবে, গণফোরাম থেকে নির্বাচিত এমপি মুকাব্বির খান বিলটিকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ উল্লেখ করে বিল পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দিতে এবং আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানের জন্য জনস্বার্থবিরোধী এই বিলটি পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। একই সঙ্গে এর প্রতিবাদে নিজের উত্থাপিত সংশোধনীগুলো প্রত্যাহার করে নেন।

মুকাব্বির খান বলেন, চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই সে কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিতে একবার ইনমেনিটি দেওয়া হয়েছিল। আজ দুর্নীতিবাজদের, মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটিসহ বিলটি আনা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম আরও বাড়বে।

এর আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তুলে মুকাব্বির খান বলেন, ‘বিদ্যুতের কালো আইন তুলে দিয়ে দেখেন দুর্নীতিবাজরা  কোথায় পালায়? বিদ্যুতের কালো আইন হলো ওদের কর্মকাণ্ডকে দেওয়া ইনডেমনিটি। আশা করি, এটা প্রত্যাহার করে নেবেন’।

বিলে বিদ্যমান আইনের ৩৪ ধারার (ক) উপ-ধারা (৩) এর সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘তবে, শর্ত থাকে যে, কমিশন কর্তৃক প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’ এছাড়া, বিলের ৩৪ক ধারা সংশোধন করে ‘ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা: সংযোজন করে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুদকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখিয়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখিবার স্বার্থে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসি'র পাশাপাশি সরকারের ক্ষমতা সংক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি জরুরি বিবেচনায়, বর্ণিত বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।