জাতীয়

৬ লেনে উন্নীত হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক 

ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়কটি ৬ লাইনে উন্নীত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে এইচইজিও-মীর আকতার।

সূত্র জানায়, এই মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সড়কটি উপ-অঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান করিডোর হওয়ায় ৬-লেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৬-লেনে উন্নীত করা হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং বিভাগীয় শহর সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে এবং এলাকার আর্থ-সামজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে।

‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ১৬৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার (জিওবি ৩৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ও প্রকল্প ঋণ ১৩২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ ৯৫ হাজার) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদে গত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ-২০০৬) অনুযায়ী উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়নে গৃহীত ক্রয়কাজের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে ঋণচুক্তির শর্ত প্রাধান্য পাবে। উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর সঙ্গে এ প্রকল্পের ঋণচুক্তিতে উল্লেখ আছে যে, এডিবি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুযায়ী ক্রয়কাজ সম্পাদন করতে হবে। তাই বিবেচ্য ক্রয়কাজ এডিবি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্রয়কাজের প্রতিটি ধাপে এডিবি’র সম্মতি নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের ঢাকা-(কাঁচপুর) থেকে সিলেটের পীর হাবিবুর রহমান চত্ত্বর পর্যন্ত সড়কের মোট দূরত্ব ২২৪.২২৮ কিলোমিটার। তবে ১১.৫৬ কিলোমিটার সড়ক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত) ‘আশুগঞ্জ (নদীবন্দর)-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া (স্থলবন্দর) সড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং ২.৩৪ দীর্ঘ ভৈরব ব্রিজ ৪ লেন বিশিষ্ট হওয়ায় তা এই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের আওতায় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২০৯.৩২৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১.৮১২ কিলোমিটার মহাসড়ক, ১৩টি (মোট ৭৭৮০.১৯ মিটার) ওভরপাস বা রেলওয়ে ওভারপাস, ৬৬টি  (মোট ৬০২০ মিটার) সেতু, ৩০৫ টি  মোট ১৪৮৯.১৫ মিটার কালভার্ড, সার্ভিস লেনে ১৭.৫৯ কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট, একটি ইন্টারচেঞ্জ এবং পথচারী পারাবারের জন্য ২৬টি (মোট ১২৭১.৪০ মিটার) ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ ৬টি প্যাকেজের অধীনে ১৩টি লটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

জানা গেছে, প্রকল্পের ডব্লিউপি-২ এর লট নং ডিএস-৪ এর জন্য ২০২১ সালের ১২ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৯টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। বিভিন্ন কারণে ৯টি দরপ্রস্তাবের মধ্যে ৬টি রেসপন্সিভ হয়। এরমধ্যে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের অনুমোদন অনুসারে ৩টি দরদাতার দরপ্রস্তাব নন-রেসপন্সিভ হয়। এরপর যুক্তিযুক্ত কারণে আরও একটি দরপ্রস্তাব বাতিল করা হয়। বাকি দুটি সংস্থার মধ্যে হিগো-মীর আখতার-এর প্রস্তাবে মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। পরবর্তীতে এডিবি’র অনুমোদন পাওয়ায় প্রকল্পটি যৌথভাবে হিগো-মীর আখতারকে দিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।