জাতীয়

যোগ্যতায় সফল না হয়ে ফেসবুককে ঢাল বানানো হচ্ছে, কীসের ইঙ্গিত দিলেন পলকপত্নী

অনেকেই নিজের যোগ্যতার ওপর আত্মবিশ্বাস না রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন— এমন অভিযোগ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকা।

সোমবার (২৯) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এই মনোভাব তুলে ধরেন।

কণিকা লিখেন, এক শ্রেণীর মানুষ যারা নিজের যোগ্যতায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম, তারা সফল হওয়ার জন্য ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। নিজের বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, মানবিকতা, বিসর্জন দিয়ে; পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সম্মান সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমাদের দেশের কিছু মানুষ আবার এদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং তাদের সাপোর্ট দিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের নিজ যোগ্যতায় সফল হওয়া দিনে দিনে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে।

পড়ুন: সার্টিফিকেট পোড়ানো ‍মুক্তাকে ৩৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দিলেন পলক

তিনি আরও লিখেন, পরোক্ষভাবে আমরা বিবেক, বুদ্ধি বিবর্জিত একটা অসুস্থ এবং মানসিক বিকারগ্রস্ত জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যা খুবই দুঃখজনক!

আরিফা জেসমিন কণিকার এই পোস্টের পরই কমেন্ট বক্সে হরেক রকমের মন্তব্য আসতে থাকে। সেখানে বেশিরভাগ কমেন্টেই ছিল ‘সার্টিফিকেট পোড়ানোর’ ভাইরাল ইস্যু নিয়ে।

পলকের স্ত্রী কণিকার এই পোস্ট কীসের ইঙ্গিত, সেটাই মেলাচ্ছেন নেটিজেনরা। সাজেদা ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেন, নিজের যোগ্যতা থাকলেই সফল হওয়া যায় না। কিছু মানুষ সফল হতে পারে। সবার ব্রেইন এক নয়। বাংলাদেশের অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেও বেকার। চাকরি চাইলেই পাওয়া যায় না। বহু চেষ্টা করেও চাকরি পাওয়া যায় না।

ফিরোজ কবির নামে একজন মন্তব্য করেন, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্য আমি আপনি সমাজ সবাই দায়ী। ভাইরাল হলেই এমপি-মন্ত্রী ডেকে নিয়ে চাকরি, টাকা, কম্পিউটার দিচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় হলেও ভাইরাল ব্যক্তি লাভবান হচ্ছে।

সজিব রানা নামে একজন লিখেন, আর যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের রাজনীতি করে জীবন-যৌবন রোদে, ঘামে, পরিশ্রমে পুড়ালো; দিনশেষে তাদের পাশে তো কেউ দাঁড়ায় না।

শরীফ ওবায়েদুল্লাহ নামে আরেকজন লিখেন, সাংবাদিক বন্ধুরা কই? আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পোড়াতে চাই। এভাবে ভাইরাল হয়ে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে চাকরি পেলে, আমিও পেতে চাই। তাও আবার সরকারি চাকরি, এত কষ্ট না করেই।

উল্লেখ্য, রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা মুক্তা সুলতানা ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে গত ২৩ মে ফেসবুকে লাইভে এসে তার সব অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেন। বিষয়টি একটি টেলিভিশনের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে মুক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী এবং তার দপ্তরে আসার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ই-মেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। তার বেতন ৩৫ হাজার টাকা।

চাকরি পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মুক্তা বলেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সহানুভূতির কারণে আমি চাকরি পেয়েছি। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। একজন প্রতিমন্ত্রী ফেসবুক ভিডিও দেখে নাগরিকের ক্ষোভ-দুঃখ ও হতাশা দূর করতে তাকে খুঁজে এনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাকরির ব্যবস্থা করবেন, তা এখনো তার কাছে বিস্ময়ের বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হয় এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য আইসিটি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছি। 

তিনি বলেন, যথাযথ শিক্ষাগ্রহণ করলে বাংলাদেশে কোনও শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার থাকবে না। তারুণ্যের মেধা ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে তৈরি করতে পারলে চাকরির পেছনে ঘুরতে হবে না। বরং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। আইসিটি বিভাগ তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলেও জানান তিনি।