ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ডিএসসিসির সব পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর নগর ভবনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বাজেট ঘোষণাকালে তিনি এ তথ্য জানান। এসময় তিনি ডিএসসিসির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।
মেয়র তাপস বলেন, আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে দেখছি, ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত ভোটার ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধকারী পরিবারের অনেকেই এখনো বেকার রয়েছে। তারা যথাযথ কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ঢাকাবাসীর সব পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আমি পাঁচ বছর মেয়াদি এ কর্মসূচি নিয়েছি। এ প্রকল্পের নাম হবে ‘মেয়র শেখ তাপসের কর্মসংস্থান কর্মসূচি, ঢাকা হবে বেকার মুক্ত নগরী’।
তিনি বলেন, আমরা শুধু অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নয়, তাদের পারিবারিকভাবে সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য আমরা নিবেদিত থাকবো। সেটা পুঁজি দিয়ে হোক কিংবা দোকান বরাদ্দ দিয়ে হোক, আমরা পরিবারগুলোর পাশে থাকবো।
তিনি আরও বলেন, ঢাকাবাসীর কর্মসংস্থানের দায়িত্ব অবশ্যই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যথাযথভাবে পালন করবে। ঢাকা হবে বেকার মুক্ত নগরী। গত চার বছরে আমরা রাজস্ব দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছি। ডিএসসিসি এখন সাবলম্বী একটি প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে এই সংস্থাটিকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। ঢাকাবাসীর সহযোগিতায় আগামীতে ডিএসসিসিকে আধুনিক সচল ও উন্নত নগর হিসেবে গড়ে তোলার হবে।
মেয়র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলদারদের কবলে থাকা নলগোলা ভাওয়াল রাজবাড়ী দখলমুক্ত করা হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকা সমমূল্যের এ ঐতিহাসিক স্থাপনা একটি চক্র নানা কৌশলে কয়েক দশক ধরে দখল করে রাখে এবং সেটার আদিরূপ পরিবর্তন করে। দখলমুক্ত সেই স্থাপনার আদিরূপ ফিরিয়ে আনতে আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি সেখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে নলগোলা ভাওয়াল রাজবাড়ীকে একটি পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের সামগ্রিক উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
তাছাড়া, রূপলাল হাউজ, বড় কাটরা, ছোট কাটরা ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তরের করার অনুরোধ জানিয়ে ইতোমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র।
ঢাকা শহরে গেজেটভূক্ত ৭৪টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে ৬৬টির অবস্থান ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায়। এ ৬৬টি স্থাপনাসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে সাতটি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির হতে লালবাগ কেল্লা ও মৃধা মসজিদ হয়ে শ্মশানঘাট এলাকা নিয়ে ৫ নম্বর বলয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন। বর্তমানে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ডিএসসিসি ২০২০ সাল হতে নিয়মিতভাবে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব এবং ২০২২ সালে হতে নিয়মিতভাবে বাঙালি লোকজ ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক পিঠা উৎসব আয়োজন করে চলেছে। ২০২৪ সালে নগর ভবন প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো ‘বাংলা নববর্ষ-১৪৩১’ উদযাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।