মাওলানা মো. জহিরুল ইসলাম : বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৭ রমজানে। যুদ্ধ হয়েছিল ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় হিজরিতে। এই যুদ্ধ ছিল মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে হক ও বাতিলের যুদ্ধ।
বদর একটি কূপের নাম। এই কূপের নিকটবর্তী স্থানকে বদর প্রান্তর বলা হয়। এটি মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত। এ প্রান্তরের যুদ্ধই ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ।
‘নিশ্চয়ই পরস্পর সম্মুখীন বাহিনীদ্বয়ের মধ্যে তোমাদের জন্য সুন্দর দৃষ্টান্ত আছে। একটি বাহিনী আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল, অপর বাহিনীটি ছিল খোদাদ্রোহী।’ (আল কুরআন)
মহানবী (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর দীর্ঘ ১৩ বছর মক্কায় অতিবাহিত করেন। রাসুল (সা.) কাফেরদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি আল্লাহর হুকুমে মক্কায় বসবাসরত সাহাবিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে মদিনায় হিজরত করেন। ঠিক হিজরতের দ্বিতীয় বছরেই নবীজীর (সা.) নেতৃত্বে গঠিত মদিনা রাষ্ট্রটি মক্কার কাফের শক্তির হুমকির মুখোমুখি হয়।
বদর ইসলাম ও মুসলমানের জয়ের ইতিহাস। বদর হলো অধিক সংখ্যক কাফেরের ওপর স্বল্পসংখ্যক মুমিনের সফলকাম হওয়ার ইতিহাস। বদর হলো আত্মত্যাগের ইতিহাস। বদর হলো শাহাদাতের সূচনার ইতিহাস। বদর হলো যুদ্ধের ময়দানে ফেরেশতা দিয়ে মুমিনদেরকে আল্লাহর সাহায্য করার ইতিহাস।
সেদিন ৩১৩ জন সাহাবিকে নিয়ে রণক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে রাসুল (সা.) এই বলে প্রার্থনা করতে থাকেন, হে প্রভু! আজ তুমি যদি মুসলমানদের এ ক্ষুদ্র দলটিকে সাহায্য না করো, তারা যদি নিশ্চিহ্নই হয়ে যায়, তাহলে তোমার মহিমান্বিত নামটি কে উচ্চারণ করবে? আর এ পৃথিবীর বুকে তোমার নাম উচ্চারণকারী কেউই তো থাকবে না।
মক্কাতে এই বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলা মদিনার মুসলমানদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়েছে। আর সে জন্যই আক্রমণাত্মক নীতি অনুসরণ করে ইসলাম ও মুসলমানের চিরশত্রু আবু জাহেল ১০০০ সৈন্যসহ আবু সুফিয়ানের সাহায্যে মদিনার পথে রওনা হয়।
মহানবী (সা.) আল্লাহতায়ালার আদেশপ্রাপ্ত হয়ে সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ ১৬ রমজান ৩১৩ জনের একটি মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে কুরাইশদের মোকাবিলা করার জন্য বদর প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হন।মক্কা থেকে এক হাজার কাফের সেনার একটি সশস্ত্র দল মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত বদর ময়দানে এসে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে। ৩১৩ জন সাহাবি (যাদের মধ্যে মক্কা থেকে আসা মুহাজির ও মদিনায় বসবাসরত আনসাররা ছিলেন) নিয়ে বদর ময়দানের আরেক পাশে উপস্থিত হন মহানবী (সা.)।
এ ছিল এক অসম যুদ্ধ। একদিকে সত্যের পক্ষে মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা, প্রায় নিরস্ত্র। সঙ্গে দুটি ঘোড়া, ৭০টি উট আর যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অল্প কয়েকটি ঢাল-তরবারি। অপরদিকে সশস্ত্র ১ হাজার যোদ্ধার নিয়ন্ত্রণে ১০০ ঘোড়া আর ৭০০ উট।
এ যুদ্ধে সাহাবি যোদ্ধা শহীদ হন ১২ থেকে ১৪ জন আর কাফেরদের মধ্যে উত্বা, শাইবা, আবু জাহেলের মতো শীর্ষ কাফেরসহ ৭০ জনের মতো নিহত হয়। বন্দি হয় আরও ৭০ জন। বদর যুদ্ধের অভূতপূর্ব বিজয়ে মুসলমানদের ভিত দৃঢ়তর হয়।
এরপরও মক্কার কাফের ও মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে মক্কা বিজয় পর্যন্ত উহুদ, খন্দক, খয়বরের মতো আরও কটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নামতে হয় মুসলমানদের।
ইসলামের আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সাধনা, প্রার্থনা, সেবা, আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের সব অধ্যায় যে একই সূত্রে গাঁথা, তার এক মহান স্বাক্ষর দ্বিতীয় হিজরির এই ১৭ রমজান।
বদর দিবসের এই সামগ্রিক শিক্ষা বিকশিত হোক প্রত্যেক মুসলমানের অন্তর ও জীবনে। আমিন।
লেখক : প্রভাষক, আরবি বিভাগ, মেহেরপুর আলীয়া মাদ্রাসা, মেহেরপুর
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৪/ শাহ মতিন টিপু