সচিবালয়ে সমবায় সমিতির ক্যান্টিেনর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুই গ্রুপ এখন মুখোমুখি। ক্যান্টিন দখল নিয়ে মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন তারা। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর সচিবালয়ে ক্যান্টিনসহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এবং ক্যান্টিন দখলে কর্মচারীদের দুই গ্রুপ অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এ নিয়ে যে কোনো সময় আরো বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সচিবালয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড সচিবালয়ে দুটি ক্যান্টিন, ওএমএস-এর দোকান পরিচালনা করে আসছিল। চার নম্বর ভবনের পেছনে সমবায় সমিতির ক্যান্টিনটি গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্মচারীদের একটা গ্রুপ দখল করার চেষ্টা করে। কিন্তু সমবায় সমিতির আগের কমিটি তাদের নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু এর মধ্যেই নানা অনিয়মের অভিযোগে সমবায় সমিতির আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে কর্তৃপক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয়। তারাই কান্টিন পরিচালনা করছিল। এদিকে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে সমিতির আগের কমিটি এ বিষয়ে আদালতে রিট করে।
কর্মচারীরা জানিয়েছেন, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার আদালতের এই রিটের রায়কে কেন্দ্র করে ক্যান্টিন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমবায়ের আগের কমিটির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সংযুক্ত পরিষদের বাদিউল গ্রুপের সঙ্গে নুরুল ইসলাম গ্রুপের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে খোদ নুরুল ইসলামসহ তার গ্রুপের পাঁচজন আহত হন বলে জানিয়েছেন মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতের রায়ের বিষয়টি আমাদের জানায়। আমরা বলেছি, এটি তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাক। তারা ক্যান্টিনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললে আমরা বন্ধ করে দেব।’’
‘‘এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে যখন ক্যান্টিনের বাজার এসেছিল, ট্রাক থেকে ওএমএস-এর পণ্য নামানো হচ্ছিল, তখন বাদিউলরা আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসররাও ছিল। তারা ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে আমাদের ওপর রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমিও আহত হয়েছি।’’
নুরুল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বানচাল ও সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
অন্যদিকে নুরুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে বাদিউল কবীর গ্রুপের মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘গত দুই দিন ধরে নুরুল ইসলাম গ্রুপের লোকজন সচিবালয়ের উক্ত ক্যান্টিন দখলে রাখার জন্য লাটিসোটা নিয়ে অবস্থান করছিল। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ক্যান্টিন পরিচালনার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে সমিতির লোকজন আমাদের সভাপতিসহ নেতাদের ডাকেন। এ সময় ওই গ্রুপের নুরুল ইসলামসহ অন্যরা ছিলেন। এক কথায় দুকথায় হঠাৎ নুরুল ইসলাম আমাদের বাবু ভাইকে চেয়ার ছুড়ে মারেন। এসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে হাতাহাতির মতো ভুল বোঝাবুঝি ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘নুরুল ইসলাম পুরো ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি যদি চেয়ার ছুড়ে না মারতেন তাহলে কোনো ঘটনাই ঘটতো না।’’
এ বিষয়ে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, চার নম্বর ভবনের পেছনে সমবায় সমিতির এই ক্যান্টিন বন্ধ রয়েছে। ক্যান্টিনের পাশে মিল্কভিটার দোকানটিও বন্ধ। এছাড়া ক্যান্টিনের আশেপাশে খাবারের দোকান, ৪ নম্বর ভবনের নিচে খাবার ও মুদি-মনিহারীর দোকান এবং ওএমএস-এর দোকান বন্ধ রয়েছে।
তাছাড়া ৬ নম্বর ভবনের নিচে ২ নম্বর ক্যান্টিনও বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এড়াতে সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবন এবং এর আশেপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।