জাতীয়

রাজনীতিতে পরিবর্তন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন¬— কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।   

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এসবের মধ্যে কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যকে সরাসরি বিবেচনা করলেই হবে না, বরং জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিদের রাখা হলে তা নির্বাহী বিভাগের ওপর একটি কার্যকর ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করার বিষয়ে দেশব্যাপী ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে দলীয় প্রধান না হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে, যা ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সদস্যদের অযথা প্রভাব আইনগত দিক থেকে বৈধ নয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও একটি রায় আছে। স্থানীয় পর্যায়ে জাতীয় সংসদের সদস্যদের অবৈধ সংযুক্তি বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রথম পর্যায়ে ৬২টি বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য গড়ে ওঠেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে কোনো নোট অব ডিসেন্ট (বিভিন্ন মতামত) ছিল না, বাকি ৯টিতে কিছু ভিন্নমত ছিল। 

ভিন্নমতের বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, এসব বিষয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে এবং কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা জানতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। পাশাপাশি, যে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তাদের গুরুত্বও বিবেচনায় রাখা হবে।

কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্ট নয়। কমিশনের কাজ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা। এই আলাপ-আলোচনা দীর্ঘমেয়াদী হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় মোট ৬২টি বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টির ওপর কোনো ধরনের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল না, বাকি ৯টির ওপর ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।