আফগানিস্তান সফরে তালবান সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে কওমি ঘরানার আলেমরা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ‘প্রসপার আফগানিস্তান’ এ তথ্য জানিয়েছে। যুদ্ধোত্তর আফগানিস্তানে সংহতি ও উন্নয়ন অগ্রগতির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা এই সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে আলেম, চিকিৎসক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধি দল আফগানিস্তানে নিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি উলামাদের এ সফরও তাদের ব্যবস্থাপনাতেই সম্পন্ন হয়েছে।
বৈঠকে আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয় প্রাধান্য পায়- বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং আলেমদের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমীর খান মুত্তাকি বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং আফগান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি আফগানিস্তানের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, “এখানে তুলা, কার্পেট, শুকনো ফল এবং মার্বেলসহ বহুবিধ খাতে ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।” তিনি জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল কাবুল সফরে আসবেন।
তিনি আরো বলেন, “আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হলে স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ থেকে যে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে, তা আমাদের উৎসাহিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিকভাবে লাভজনক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।”
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই প্রায় সব দেশের সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তবে বাংলাদেশ এখনও সেই পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশি উলামাদের দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানোর আহ্বান জানান। প্রতিনিধিদল বিষয়টিকে স্বাগত জানায়।
বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা আফগান সরকারের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, এই সফরের মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যে আরো নিয়মিত ও ফলপ্রসূ যোগাযোগের সূচনা হবে।
প্রতিনিধিদলের সদস্য মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, “এই সফর একটি নতুন সূচনার প্রতীক। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল আফগানিস্তানের পুনর্গঠন প্রত্যক্ষ করার এবং মাওলানা মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা তাকে খাতমে নবুয়ত সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মানুষ আরো ঘনিষ্ঠ হলে এর সুফল দুই দেশের সরকারই নয়, বরং উলামা, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলোও ভোগ করবে।”
তালেবানের প্রভাবশালী নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমীর খান মুত্তাকির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আফগানিস্তানে সফররত মামুনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশি আলেমদের মধ্যে রয়েছেন মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মাহবুবুল্লাহ কাসেমী, মুফতি মুহাম্মদ হিদায়াতুল্লাহ।
এর আগে, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়ুকবের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন মামুনুল হকরা।
বাংলাদেশি প্রতিনিধি হিসেবে তারা কাবুলে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলেও জানা গেছে।
তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মামুনুল হকের নেতৃত্বে কওমি আলেমরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছান। এসময় আফগানিস্তানের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও তালেবান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের ভাই মুফতি আব্দুল মান্নান তাদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আপনাদের এই প্রতিনিধি দলকে আফগানিস্তানে স্বাগত জানাতে পেরে আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আনন্দ প্রকাশ করছি। আমরা আশা করি, এই সফরের মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আরো সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।”