জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ মো. আব্দুর রশীদ।
তিনি বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমন্বিত উদ্যোগ, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং সময়াবদ্ধ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন সম্ভব।”
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ‘যৌথ ঘোষণা' বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় কৃষি, খাদ্য, শিল্প, বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (FAO, WFP, UNICEF, UNDP), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কারিগরি সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
মূল আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল: ১. ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে তদারকি: মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদারকি কমিটি গঠন করা হবে, যারা বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করবে।
২. নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন: কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রাসায়নিকমুক্ত ফসল উৎপাদন, তামাকের পরিবর্তে বিকল্প ফসল চাষে প্রণোদনা, কোল্ড চেইন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়।
৩. খাদ্য প্যাকেট লেবেলিং: প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে Front-of-Package Labeling (FOPL) বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়, যাতে পুষ্টি উপাদান, অ্যালার্জেন, চিনি, সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
৪. নিরাপদ প্রাণিজ পণ্য উৎপাদন: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ মাছ, দুধ, ডিম উৎপাদন, লবণ হ্রাস প্রযুক্তি ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
৫. স্বাস্থ্যবান্ধব শিল্পনীতি: শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খাদ্য পণ্যের পুনর্গঠন (reformulation) উৎসাহিত করতে প্রণোদনার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট, লবণ ও চিনি কমানোর পদক্ষেপ গৃহীত হবে।
৬. নিয়ন্ত্রিত আমদানি-রপ্তানি: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য ও তামাকজাত পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ, পোর্টে স্ক্রিনিং কার্যক্রম এবং আমদানি খাদ্যে পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণে কাজ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি ও কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী এনসিডি প্রতিরোধে সফলতা অর্জন সম্ভব। এতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত নয়, সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন ও মানবসম্পদের গুণগত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।”