জাতীয়

সব প্রতিবন্ধীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে: উপদেষ্টা

জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে দেশের সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। 

তিনি বলেছেন, “সঠিক তথ্যভিত্তিক সেবা দিতে হলে সারা দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিবন্ধনের আওতায় আনতেই হবে। এজন্য পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত সচেতনতা জরুরি।”

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ৩৪তম আন্তর্জাতিক ও ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ। আরো বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন।

উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ জানান, অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। 

তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু নিজের সন্তানের খোঁজ রাখলেই হবে না; পাশের বাড়ির বিশেষ মেধাবী শিশুটিও নিবন্ধিত কি না, সেটিও জানতে হবে।”

উপদেষ্টা জানান, ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দ নয়, ‘বিশেষ মেধাবী’ শব্দটি তিনি ব্যবহার করতে চান।

আগামী বছর ডিসেম্বরের পর সরকার থাকুক বা না-থাকুক প্রতিবন্ধী সেবা উন্নয়ন কার্যক্রম চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ১২টি ভিন্ন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রতিবন্ধিতার জন্য নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করে সমস্যা, সমাধান ও বাস্তবায়ন তুলে ধরার নির্দেশনা দেন শারমীন মুরশিদ।

তিনি বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় যেসব মানুষ চোখ, হাত বা পা হারিয়েছেন, তাদেরকেও এই মন্ত্রণালয়ের আওতায় এনে বীরের মর্যাদা দিতে হবে।” 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্দোলন কিংবা দাবি প্রসঙ্গে তিনি জানান, দাবি-দাওয়ার ভাষা পরিবর্তনের সময় এসেছে—‘দাবি’র পরিবর্তে ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি ব্যবহার করা যায় কি না, তা ভাবার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এমডি বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, “দুর্ঘটনা বা বার্ধক্যে যেকোনো মানুষেরই প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহনশীল আচরণ সমাজের দায়িত্ব। বর্তমানে ফাউন্ডেশন তাদের ১০৩টি সেবা কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি ৪৫টি থেরাপি ভ্যান এবং ৩৪টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের বেতন প্রদানসহ নানা সেবা দেওয়া হচ্ছে।”

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান জানান, দেশে নিবন্ধিত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এখন ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার। তাদের মধ্যে ৩৪ লাখের বেশি মানুষকে সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এর লক্ষ্য—শতভাগ প্রতিবন্ধীকে সেবার আওতায় আনা।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলাও একই স্থানে শুরু হয়েছে। যেখানে ৩২টি সংগঠন অংশ নিচ্ছে।