ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মাঠে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টহল।সম্ভাব্যপ্রার্থীদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে গানম্যান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বড় শহরগুলো থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে যৌথ টহল। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে নিয়মিত যৌথ টহল চালানো হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গোয়েন্দা নজরদারি, গুজব ছড়ানো রোধে এবং সম্ভাব্য নাশকতার ছক চিহ্নিত করতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে। যাতে নির্বাচনের সময় শক্তির অপব্যবহার না হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট বা ফেক নিউজ শনাক্ত করতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ও বিশেষ এলাকা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোকে ‘সাধারণ’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে ভাগ করেছে। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। পাহাড়ি বা চরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ যাতায়াত ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা সাধারণ ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য অভয় দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু এলাকা এবং নারী ভোটারদের নিরাপত্তায় আলাদা নজরদারি রাখা হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে ট্রাফিক ও সড়ক পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য দেড় লাখ পুলিশ মোতায়ন করা হবে।ইতোমধ্যেই তাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে করা যায়, কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় তাদের শোখানো হচ্ছে। এছাড়া আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য নির্বাচনের দিন ছাড়াও নির্বাচনের আগে, পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মেট্রোপলিটন, জেলা শহরগুলোতে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১২ ডিসেম্বর পল্টনের কালভার্ট রোডে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শরীফ ওসমান হাদীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করার ঘটনার পর পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে নিরাপত্তা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠে যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে বা নির্বাচনি পরিবেশ ঘোলাটে করার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তার জন্য কয়েকজন প্রার্থী গানম্যান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্তমূলক এক বৈঠক শেষে উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, “কোন প্রার্থী যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন তাহলে তাকে সরকার গাণম্যান দেবে। এছাড়া সার্বিক নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস-২ অভিযান অব্যাহত আছে।”
নির্বাচনি মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চেত করতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতো এলিট ফোর্স র্যাবের প্রতিটি ব্যাটেলিয়ন কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে টহল জোরদারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মোড়, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাতের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনি মাঠে বিশৃঙ্খলা এড়াতে র্যাবের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে প্রতিদিন চিহ্নিত অপরাধী গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে এ কার্যক্রম আরো জোরালোভাবে করা হবে।”