জাতীয়

গাজীপুর-ঢাকা ট্রেনই জনপ্রিয়

হাসমত আলী, গাজীপুর : রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর। সড়ক ও জনপথের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার মতিঝিল থেকে গাজীপুর জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সাধারণ গতির কোন বাহনে এ পথটুকু পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে এক ঘণ্টা কিংবা সোয়া ঘণ্টা। কিন্তু সড়ক পথে এখন এ পথ পাড়ি দিতে হরহামেশাই সময় লাগছে ৩ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। যানজটে পড়লে সময় আরো বেশি লাগে।

 

তবে গাজীপুর থেকে রেলপথে এখনও এক ঘণ্টা থেকে সোয়া ঘণ্টায় কমলাপুর স্টেশনে যাওয়া যায়। তাই রেলপথে গাজীপুরে যাত্রী ক্রমাগত বাড়ছে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতোমধ্যে জয়দেবপুর-কমলাপুর রেলপথে তুরাগ এবং ডেমু ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। কম সময়ে গন্তেব্যে যাওয়া যায় বিধায় এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অনেক যাত্রী দুঃসহ যানজট এড়াতে এই ট্রেন সার্ভিসগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

 

গাজীপুরে অবস্থান করে ঢাকায় অথবা ঢাকায় অবস্থান করে গাজীপুরে বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ এবং ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক পথের পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে রেলপথকে বেছে নিয়েছেন। যাদেরকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় তাদের মধ্যে অনেকেই এখন মাসিক ৪৫০ টাকায় রেলওয়ের টিকিট সংগ্রহ করে যাতায়াত করে থাকেন।

 

জানা গেছে, চাকুরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় তুরাগ এক্সপ্রেক্স ট্রেনটি। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এবং বিকেল ৫টা ২০মিনিটে কামলাপুর থেকে ট্রেনটি ছাড়ে। ভাড়া ১৫ টাকা। এ ট্রেনটি কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর জংশনের মধ্যবর্তী সকল স্টেশনেই যাত্রাবিরতি করে। ক্রসিংয়ে না পড়লে এ ট্রেনে সোয়া ঘণ্টায় গন্তব্যে যাওয়া যায়।

 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, তুরাগ ও ডেমু ট্রেন ছাড়াও জয়দেবপুর জংশন হয়ে ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন ৫০টি ট্রেন আপ-ডাউন চলাচল করে। এরমধ্যে আন্ত:নগর ট্রেনগুলো কমলাপুর-জয়দেবপুর জংশনের মধ্যে দু’একটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী দেখা যায়, কমলাপুর-জয়দেবপুর অথবা জয়দেবপুর-কমলাপুর পর্যন্ত আন্ত:নগর ট্রেনগুলোর এক ঘণ্টা বা তারও কম সময় লাগে। এ সব ট্রেনে এ পথটুকুর জন্য আসনবিহীন টিকিট পাওয়া যায়, যার মূল্য ৩৫ টাকা। আর কমিউটার, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে সময় লাগে সোয়া ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বর্তমানে ডাবল রেল লাইন রয়েছে। টঙ্গী স্টেশন থেকে জয়দেবপুর জংশনের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এখানে ডাবল রেল লাইন নেই। যে কারণে টঙ্গী-জয়দেবপুর জংশনের মধ্যে ক্রসিংয়ে পড়তে হয়। তখন সময় বেশি লাগে।

 

জয়দেবপুর জংশনের প্রধান স্টেশন মাষ্টার জিয়া উদ্দিন সরদার জানান, এ জংশন থেকে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার বৈধ যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করেন। এ ছাড়া বেসরকারি ট্রেনে আরও হাজার খানেক যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করেন।

 

তিনি জানান, প্রতিদিন তুরাগ ট্রেনেই জয়দেবপুর জংশন থেকে ৭-৮শ যাত্রী ঢাকায় যান।

 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইন স্থাপিত হলে আরও কম সময়ে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন এবং যাত্রী সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।’

 

গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী জিএম আতিকুল ইসলাম সেতু। তিনি থাকেন ঢাকার কাঠালবাগান এলাকায়। পেশাগত কারণে তিনি প্রায় প্রতিদিন ঢাকা থেকে গাজীপুরে আসেন। তিনি জানান, ফার্মগেট থেকে বাসে চড়ে গাজীপুর শহরের শিববাড়ি আসতে প্রতিদিনই গড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যেতো এবং ভাড়া গুণতে হতো ৫০টাকা। এতে সময়মতো আদালতে পৌঁছানো যেতো না। এখন বাসে না চড়ে তেজগাঁও থেকে ট্রেনে করে শিববাড়ি মোড়ের পাশ্ববর্তী জয়দেবপুর জংশনে নামেন তিনি। এতে সময় লাগে পৌণে এক ঘণ্টা। ভাড়া তুরাগ ট্রেনে ১১ টাকা এবং ডেমুতে ১৫ টাকা।

 

প্রায় একইরকম কথা জানালেন গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল এলাকার মো. সিরাজ উদ-দৌলা। তিনি চাকরি করেন ঢাকায় তেজগাঁওয়ের অ্যাপোলো ইস্পাস কমপ্লেক্স লিমিটেডে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে যাতায়াত করেন এবং সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেন। তিনি তুরাগ ট্রেনের একজন নিয়মিত যাত্রী।

 

তিনি জানান, বাসে তেজগাঁও পর্যন্ত যেতে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। অনেক সময় যানজটের কারণে আরো বেশি সময় লেগে যায়। এতে সময়মত অফিসে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অপরদিকে ট্রেনে জয়দেবপুর থেকে মধ্যবর্তী ধীরাশ্রম, টঙ্গী, বিমানবন্দর, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বিরতি দিয়ে এবং অন্য ট্রেনের ক্রসিংসহ তেজগাঁও পর্যন্ত যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। নির্দিষ্ট সময় ট্রেন ছাড়লে অফিস ধরতে কোন সমস্যা হয় না। তিনি আরো জানান, তুরাগ ট্রেনে জয়দেবপুর, ধীরাশ্রম ও টঙ্গী থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার লোক যাতায়াত করে থাকেন। সময় বাঁচাতে এবং যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে ছাদে চড়েও যাতায়াত করেন।

 

তারা তুরাগ ট্রেনের বগি বৃদ্ধি এবং লোকাল ট্রেন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বলেন, এ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন জয়দেবপুর জংশনে যাত্রাবিরতি দিলে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ স্বচ্ছন্দে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারতেন।

 

তারা আরো বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় তুরাগ ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। এর বগি সংখ্যা মাত্র ৮। জয়দেবপুর, ধীরাশ্রম, টঙ্গী থেকে যাত্রী হয় প্রায় দুই হাজার। এই দুই হাজার যাত্রী বহন করতে অন্তত: ৪০টি বাসের প্রয়োজন। ৪০টি বাস ঢাকায় প্রবেশ করলে যানজট আরো বৃদ্ধি পেত। পক্ষান্তরে তুরাগ ট্রেনের বগি বৃদ্ধি এবং প্রতি ঘণ্টায় যদি ঢাকা-জয়দেবপুর ট্রেন চলাচল করে তবে বাসের ওপর লোকজনের নির্ভরতা কমে যাবে। কারণ, ট্রেনে সময় ও অর্থ উভয়ই বাঁচবে। ফলে ঢাকায় গণপরিবহনের প্রবেশ কমে যাবে এবং ঢাকার যানজটও কমে আসবে।

 

আইনজীবী আতিক ইসলাম সেতু, চাকরিজীবী সিরাজ উদ্দিনসহ ট্রেনের অনেক যাত্রীর অভিমত, ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেল লাইন স্থাপিত হলে কমলাপুর থেকে গাজীপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে এক ঘণ্টার কম। তাছাড়া ট্রেনে তুলনামূলক ভাড়াও লাগে কম। সময় ও অর্থ বাঁচাতে অনেকেই ট্রেনে যাতায়াতে আগ্রহী হবেন।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪/শাহনেওয়াজ