জাতীয়

কর্মখালি নাই তবু চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়

সাফিউল ইসলাম সাকিব, সাভার : কারখানাটির প্রধান ফটকেই ঝুলছিল ‘নো ভ্যাকেনসি’ অর্থাৎ কর্ম খালি নাই। কিন্তু তারপরও সকাল থেকে চাকরির আশায় ভিড় জমিয়েছেন দুই শতাধিক বেকার। এদের কেউ কেউ গত কয়েক দিনে হারিয়েছেন তাদের পুরনো চাকরি। গ্রাম থেকে আসা নতুন বেকাররাও যুক্ত হয়েছেন সেই বহরে। যারা কেবল কর্মসংস্থানের সন্ধানে গত কয়েকদিন ধরেই ছুটে বেড়াচ্ছেন আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে। কিন্তু কারখানাগুলোর ব্যয় সংকোচন নীতি এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের সেই প্রচেষ্টায়। ঈদের পর নতুনভাবে আর শ্রমিক নিয়োগ দিতে আগ্রহী নয় শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা। বরং গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি কারখানায় ছাটাই হয়েছে কয়েক শত শ্রমিক। বেশি বেতনের আশায় যারা স্বেচ্ছায় পুরনো কর্মস্থল ছেড়ে দিয়েছেন তারাও পড়েছেন বিড়ম্বনায়। সাধারনত প্রতিবছর ঈদের পর আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এবার সেখানে উল্টো চিত্র। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। শীতকালকে মন্দার মৌসুম হিসেবে গণ্য করে কারখানাগুলো। কিছু দিনের মধ্যে শীত শুরু হয়ে যাবে। এ সময় বাইরের দেশ থেকে তেমন কার্যাদেশ পাওয়া যাবে না।  এমন পরিস্থিতির জন্য শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরী দায়ী বলে দাবি করেছেন কয়েকটি পোশাক কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নতুন শ্রমিক নিলেই ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। কিন্তু একজন নতুন শ্রমিকের কাছ থেকে সেইভাবে সুফল পাওয়া যায় না। এজন্য নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে চলা হচ্ছে বলে জানান তারা।    মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার প্রধান ফটকে চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। শুধু শিল্পাঞ্চলের নলাম এলাকার গ্লোবাল আটাইর লিমিটিডেই অন্তত দুই শতাধিক বেকারের ভিড় ছিল। তবে কারখানাটির প্রধান ফটকেই ঝুলছিল কর্ম খালি নাই।   

চাকরি নিতে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক বেকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নতুন কাজের সন্ধানে গত শুক্রবার গ্রাম থেকে আশুলিয়ায় এসেছি। শনিবার থেকে বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে চাকরির সন্ধান শুরু করি। সোমবার সারাদিন ঢাকা ইপিজেড এলাকায় ঘুরেছি। কিন্তু চাকরি পাই নাই। শুনলাম এই কারখানায় নতুন লোক নেওয়া হবে। ফটকে কর্ম খালি নাই নোটিশ দেখার পরও দাঁড়িয়ে আছি আশায়। সুবর্না নামের আরেক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘ঈদের আগে আমি কবিরপুরের হেসং সোয়েটার লিমিটেডে কাজ করতাম। কিন্তু বাড়ি থেকে এসে জানতে পারলাম আমাকে ছাটাই করা হয়েছে। এজন্য নতুন চাকরির খোঁজে বেরিয়েছি। শুনলাম এখানে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে, এজন্য সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। আসলেই নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ওই পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নতুন লোক নিয়োগের জন্য আমরা কোন বিজ্ঞপ্তি দেই নাই। কিন্তু ঈদের ছুটি শেষে কারখানা খোলার পর থেকে প্রতিদিন চাকরি প্রত্যাশীরা প্রধান ফটকে ভিড় করছে। অবশ্য আমাদের কিছু নতুন লোক নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ লোক নিয়োগ দিতে চাই তার কয়েক গুণ বেশি চাকরি প্রত্যাশী প্রতিদিন চাকরির জন্য আসছে। এজন্য প্রধান ফটকে আমরা কর্ম খালি নাই নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছি। চাহিদার চেয়ে বেশি চাকরিপ্রার্থী কারখানার সামনে ভিড় না করেন সে জন্যই এই ব্যবস্থা।’ 

 

রাইজিংবিডি/ সাভার/ ১৪ অক্টোবর ২০১৪/ সাকিব/ শাহনেওয়াজ