জাতীয়

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। আজ বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার ১৩৪তম জন্ম ও ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী।

বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিধি থাকবেন।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন শতাব্দীতে নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

নারীজাগরণ ও নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার জন্মদিনে প্রতি বছরের মত এ বছরও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০১৪’ উদযাপিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এ বছর নারী ও সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখার জন্য ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০১৪’ প্রাপ্তদের তিনি অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নারীজাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন দেশে নারী শিক্ষা প্রসারে যে ঐতিহাসিক অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে এ মহাদেশে মুসলিম সমাজে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, শিক্ষার অনগ্রসরতার বেড়াজাল ও বন্দিত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ নারীসমাজকে অশিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে অতুলনীয় অবদান রাখেন।’

তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক বৈষম্য থেকে দূর করে তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। তার প্রদর্শিত পথ বেয়ে আজ দেশে নারী শিক্ষার বিপ্লব ঘটেছে, বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। তা সত্ত্বেও নারীর মর্যাদা, অধিকার ও স্বাবলম্বিতা অর্জনে আরো অনেক দূর যেতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও অনুপ্রেরণায় এদেশে সকল পর্যায়ে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে।’

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম রোকেয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অনগ্রসর নারীদের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া শুধু একটি নাম নয়, তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান।’

তিনি বলেন, ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেগম রোকেয়া নারী জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেন শিক্ষার আলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হানেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে পশ্চাৎপদ নারীসমাজকে আলোর পথ দেখান। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রভূত অবদান রাখেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকায় ও শাখাগুলোতে আলোচনা সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। বাংলা একাডেমি আয়োজন করেছে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আজ বিকেল ৪টায় এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। এতে ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ও নারী আন্দোলন’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট গবেষক, অধ্যাপক মালেকা বেগম।

রোকেয়া দিবস- ২০১৪ পালন উপলক্ষে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সকাল ৯টায় পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়া স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত।

অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ-মাহফিল, আলোচনা সভা, রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা এবং তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘রোকেয়া মেলা’।

দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ ছাড়াও কর্মসূচির তিনদিনই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া গবেষকরা অংশগ্রহণ করবেন।

সব শেষে থাকবে কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একেএম নুরুন নবী, বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমেদ, রংপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির এবং জেলার পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক অংশগ্রহণ করবেন।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৪/শাহ মতিন টিপু/দিলারা