আনিসুর রহমান
<p">নাটোরের উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য গত ২৫ অক্টোবর থেকে উন্মুক্ত হয়েছে। এদিন বিকেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন।
দেশের যে কোন নাগরিক ১০টাকা দর্শনার্থীর বিনিময়ে এখন গণভবন দর্শন করতে পারেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উত্তরা গণভবন পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেকটরসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা উপকরণ, রিসিপশান ডেস্ক ও গাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা জনপ্রতি দশ টাকা দিয়ে ছুটির দিনসহ প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গণভবন পরিদর্শন করছেন। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নাটোরের উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মক্ত করা হয়। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন উত্তরা গণভবন দেখতে। এটি অনেক বছর ধরেই দর্শনার্থীদের কাছে অধরাই ছিল। বর্তমানে দৈনিক তিন শতাধিক দর্শনার্থী প্রাচিন এই স্থাপত্যটি দেখতে আসছেন।
তিনশ বছরের অধিক প্রাচীন দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের বাড়িটিই নাটোরের উত্তরা গণভবন হিসেবে পরিচিত। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা দয়ারাম রায়। একসময়ের দেওয়ান দয়ারাম রায় ১৭০৬ রাজা রামজীবন রায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে যে জমি পেয়েছিলেন ১৭৩৪ সালে তার ওপরেই স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন এই দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তিনি নাটোর মূল শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে এই রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
১৮৯৭ সালের ১০ জুন রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদা নাথ রায় নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে তিনদিনব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের এক অধিবেশন আয়োজন করেন। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। অধিবেশনের শেষ দিন ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিটব্যাপী এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। রাজা প্রমদা নাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশী বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রশিল্পী আর দেশী রাজকারিগরদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়ীটি পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়ার রাজ পরিবার দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে ১৯৬৬ সালে এ রাজভবন ইস্ট পাকিস্তান হাউজে পরিণত হয়।
১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন গর্ভনর মোনায়েম খান এটিকে গর্ভনর হাউসে রূপান্তরিত করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা দেন। আর ১৯৮০ সালের ১৭ নভেম্বও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঢাকার বাইরে প্রথম এই উত্তরা গণভবনেই মন্ত্রীসভার বৈঠক করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী; শেখ হাসিনা সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এই রাজবাড়িতে মন্ত্রীসভার বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে, সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকার প্রথমে নাটোরের উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পওে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে জনগণের জন্য উত্তরা গণভবন উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, জনগণের জন্য উত্তরা গণভবন উন্মুক্ত করতে জেলা প্রশাসন সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখানে প্রয়োজন মত পুলিশ, জনবল ও সিসি ক্যামারে ছাড়াও আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেকটর সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা উপকরণ, রিসিপশান ডেস্ক ও গাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা বলে তিনি জানান।