রাজবাড়ী প্রতিনিধি : নিষিদ্ধ পল্লীর অন্ধকার গলিতে জন্ম নিয়েও মায়েদের পথে না হেঁটে বরং একটি স্বাভাবিক জীবন লাভের কঠিন সংগ্রামে একধাপ এগিয়ে গেল তারা চারজন।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া তিন কন্যা শিশু ও একটি ছেলে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখাপড়া করে এরা প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।
জানা গেছে, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল থেকে এ বছর পতিতাপল্লীর চারটি শিশু এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরা হলো বিজ্ঞান বিভাগের শ্যামলী আক্তার (জিপিএ ৪.১৭), বাণিজ্য বিভাগের সিমা আক্তার (জিপিএ ৩.৫০), সোহেল রানা (জিপিএ ৩.০৬) এবং মানবিক বিভাগের মৌসুমী আক্তার ডানো (জিপিএ ৩.২৯)।
পতিতাপল্লীতে জন্ম নেওয়া এখানকার অধিকাংশ কন্যা শিশুকে ১২/১৩ বছর বয়সেই পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত করা হয়। ছেলেরা নেশাগ্রস্ত, পতিতার দালালসহ সমাজবিরোধী বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থার মধ্যে এ চার শিশুর এসএসসিতে সাফল্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উত্তীর্ণ সীমা ও মৌসুমী স্থানীয় কেকেএস পরিচালিত সেফ হোম, শ্যামলী আক্তার পায়াক্ট বাংলাদেশ পরিচালিত সেফ হোম এবং সোহেল রানা তার মায়ের কাছে থেকে লেখাপড়া করে।
এ প্রসঙ্গে কেকেএস সেফ হোম প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন জানান, একটি শিশুর বয়স ১৮ বছর পার হলে অথবা তাদের তত্বাবধানে না থাকলে তাকে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে ঝরে গিয়ে শিশুদের বিপথে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এ হোম থেকে যাওয়া বেশ কয়েকজন মেয়ে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের প্রচেষ্টায় পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পতিতাপল্লীর শিশুদের সুযোগ দেওয়া হলে তারাও সমাজের মূল স্রোতধারায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এসএসসির পর তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি।
রাইজিংবিডি/রাজবাড়ী/৩০ জুন ২০১৫/সোহেল মিয়া/সনি