বিশেষ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলা হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শেণির কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যেহেতু প্রমোশন পান না, সেহেতু টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হলে সাড়ে ১২ লাখ কর্মচারী বৈষম্যের শিকার হবেন বলে জানিয়েছেন নন-গেজেটেড কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি মো. হানিফ ভূঁইয়া ও মহাসচিব মো. রেজাউল মোস্তফা নতুন পে-স্কেল নিয়ে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
পরিষদ নেতাদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অসন্তোষ বললে এটা ভুল বলা হবে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন ও হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এখন থেকে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হবেন।’
নতুন পে-স্কেলে বৈষম্য কমবে, এ দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান বেতন স্কেলে সর্বনি¤œ বেতন হচ্ছে ৪ হাজার ১০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। পে-কমিশন এটা যথাক্রমে ৮ হাজার ২০০ টাকা ও ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সচিব কমিটি সর্বনি¤œ বেতন ৫০ টাকা বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ বেতন কমিয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।’
মুহিত বলেন, ‘এ ছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বেতন পার্থক্য সবসময়ই ছিল।’ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘নতুন পে-স্কেল নিয়ে কাজ চলছে। এ কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় উঠতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায় উঠবে বলে আশা করছি।’
এর আগে গত ২৭ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সোমবারে পে-স্কেল অনুমোদনের জন্য সেদিন মন্ত্রিপরিষদে উঠতে পারে বলে সংবাদ পরিবেশন করেছিল। সোমবার পে-স্কেল মন্ত্রিপরিষদে উঠেনি।
সোমবার বৈঠক শেষে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পে-স্কেল সোমবার মন্ত্রিপরিষদে উঠবে, আমি এ কথা বলিনি। আপনারা ভুল বলছেন। সোমবারটা আপনাদের সৃষ্টি। আমি বলেছি, এটা আগস্ট মাসেই মন্ত্রিসভায় উঠবে এবং এ কথা যখন আপনাদের বলেছিলাম তখনও সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাইনি। সেটি আমার কাছেই ছিল।’
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের নেতারা তাদের লিখিত বক্তব্যে প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে বৈষম্য দূরীকরণ, টাইম স্কেল বহাল রাখা ও শতভাগ সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার দাবি জানান।
এ ছাড়া সচিবালয়ের বাইরে ও সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে পদোন্নতির বৈষম্য দূরীকরণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে বৈষম্য বিলোপ করে সংবিধান অনুযায়ী সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ৬ সদস্যের হিসাবে পে-স্কেল প্রদানের দাবি জানান তারা।
তবে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে পরিষদ নেতাদের মূল দাবি দাঁড়ায় তিনটি। সেগুলো হচ্ছে প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে গ্রেড সংখ্যা ১৬টি রাখা, ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং প্রতিটি গ্রেডের মধ্যে বেতন পার্থক্য ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা।
বক্তব্যের সপক্ষে পরিষদ নেতারা বলেন, কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত ১০টি গ্রেডে মোট আর্থিক ব্যবধান ৪ হাজার ২০০ টাকা (৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০ টাকা)। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের জন্য ১০টি গ্রেডে মোট আর্থিক ব্যবধান ৫৯ হাজার টাকা (১৬ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা)। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের মধ্যে পার্থক্য মেনে নিলেও আর্থিক পার্থক্যটি একটি বড় ধরনের বৈষম্য বলে উল্লেখ করেন তারা।
এ ছাড়া কর্মচারীদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য ৮ হাজার টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা। এটাও এক ধরনের বৈষম্য। কর্মচারীদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য অন্তত ১ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন পরিষদ নেতারা।
পরিষদ নেতাদের কিছু কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও তাদের শেষ তিন দাবির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেখি কী করা যায়।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৫/হাসনাত/রফিক