বাবা দিবস _x

হাইড্রোজেন বোমা কতটা শক্তিশালী?

রাসেল পারভেজ : একটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণে নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে কয়েকটি বড় শহর। এর চেয়ে শক্তিশালী বোমা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। অবশ্য ধ্বংস ক্ষমতা নির্ভর করে শুধু ছোট বা বড়র ওপর। 

 

বিধ্বংসী ক্ষমতার দিক থেকে হাইড্রোজেন বোমার তুলনা হয় শুধু পারমাণবিক বোমার সঙ্গে। তবে পারমাণবিক বোমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা। এ ধরনের বোমা তৈরি করা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু উত্তর কোরিয়া গোপনে এই বোমা তৈরি করে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেছে।

 

১৯৫২ সালে বিশ্বের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। যার বিধ্বংসী ক্ষমতা ছিল ১ কোটি টন ট্রাইনাইট্রো টলুইনের (টিএনটি) সমান। ট্রাইনাইট্রো টলুইন রাসায়নিক বিস্ফোরক দ্রব্য।

 

এখন হাইড্রোজেন বোমার ক্ষমতা বোঝার জন্য আমরা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমা যথাক্রমে ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাটম্যান’-এর শক্তির উল্লেখ করতে পারি। লিটল বয়ের বিধ্বংসী ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার টন টিএনটির সমান। আর ফ্যাটম্যানের বিধ্বংসী ক্ষমতা ছিল ২০ হাজার টন টিএনটির সমান। তুলনা করলে ১ কোটি টন টিএনটির সমান ক্ষমতার হাইড্রোজেন বোমা নাগাসাকির মতো ৫০০টি শহর মুহূর্তে তছনছ করে দিতে পারে। হাইড্রোজেন বোমার ভয়ংকর শক্তি সম্পর্কে জানতে এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে কি?

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি হাইড্রোজেন বোমা ৬ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সমান শক্তিশালী। ভূপৃষ্ঠের ১ কিলোমিটার গভীরেও ২ কোটি টন টিএনটির সমান বিস্ফোরণ হলে নেপালের মতো একটি দেশ চোখের পলকে বিলিন হয়ে যাবে। অবশ্য একটি কথা না বললেই নয়। হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস হওয়াটা স্বাভাবিক।

 

হাইড্রোজেন বোমা আছে জাতিসংঘের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশের কাছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন এই বোমার মালিক। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা আছে রাশিয়ার কাছে। তাদের কাছে থাকা সর্বোচ্চ শক্তির বোমাটি ৫ কোটি টন টিএনটির সমান ক্ষমতার। যা বিস্ফোরিত হলে জাপানের নাগাসাকির মতো আড়াই হাজার শহর বা তার সমান আয়তনের অঞ্চল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

 

হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা খুবই জটিল বিষয়। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে এই বোমা তৈরির মূল ভিত্তি পরমাণুর ফিউশন প্রক্রিয়া। ফিউশন হলো- দুটি পরমাণু একীভূত হয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তি সঞ্চয় করা। তবে হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বর্তমান ধারণায় ফিউশন ও ফিশন দুই প্রক্রিয়াই কাজে লাগানো হয়। ফিশন হলো- একটি অনু থেকে দুই বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়। আর ফিউশন ও ফিশন প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে যে বোমা তৈরি করা হয়, তাকে বলা হয় থারমোনিউক্লিয়ার বোমা বা হাইড্রোজেন বোমা।

 

এখন বিষয় হলো- শীর্ষ পরাশক্তির পাঁচ দেশের কাছে হাইড্রোজেন বোমা আছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার কাছে এই বোমা থাকলেই বিরাট সমস্যা, কেন? এর উত্তর খুব সোজা। উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন একটি দেশ। শুরু থেকে দেশটিতে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। একনায়কতন্ত্রে চলে এই দেশটি। ফলে তারা জবাবদিহিতার ধার ধারে না। এই অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার কাছে হাইড্রোজেন বোমা থাকা মানে তাদেরকে সবার সমীহ করতে হবে অথবা তাদের বোমায় মরতে হবে। যদিও পরমাণু বোমা নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও তারা কাউকে এখনো আক্রমণ করেনি। কিন্তু পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল উত্তরের নেতারা।

 

এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া সব সময় উত্তরের নেতার অতর্কিত হামলা-আক্রমণের আতঙ্কে থাকে। হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের খবরে সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছে।

 

আমরা আশা করব, পৃথিবীতে কোনো দিন যেন হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরিত না হয়।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৬/সাইফ